ফেডের সুদহারের প্রভাব

জিসিসি অঞ্চলের ব্যাংকে শক্তিশালী মুনাফার পূর্বাভাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক অর্থনীতির বড় একটি অংশ মার্কিন মুদ্রানীতির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। এর ওপর বিভিন্ন অঞ্চলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সুদহার নির্ভর করে। ফলে আর্থিক লাভ-লোকসানও জড়িয়ে আছে মার্কিন মুদ্রানীতির সঙ্গে। এর প্রভাবে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) অঞ্চলের ব্যাংকগুলো চলতি বছরে শক্তিশালী মুনাফা অর্জন করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। খবর আরব নিউজ।

মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশিত হারে না কমায় ২০২২ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ সুদহারে রয়েছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ। এতে কাটছাঁট আসতে আরো কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছে ফেড।

জিসিসি অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কারেন্সি পেগিংয়ে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখা যায়। চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন ফেড টানা ষষ্ঠবারের মতো বেঞ্চমার্ক সুদহার দশমিক ২৫ থেকে দশমিক শতাংশে নির্ধারণ করেছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিগুলোর ব্যাংক সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিটি।

সেখানে বলা হয়, দীর্ঘায়িত উচ্চ সুদহার সত্ত্বেও অঞ্চলের ব্যাংকগুলো শক্তিশালী মুনাফা অর্জন করবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সহায়ক অর্থনীতি, ব্যাংকগুলোর সিকিউরিটিজ বা বিনিয়োগে অংশগ্রহণ সতর্কতামূলক রিজার্ভ।

যখন একটি দেশের সরকার বা আর্থিক কর্তৃপক্ষ কোনো একটি বিদেশী মুদ্রার সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হার নির্ধারণ করে তাকে কারেন্সি পেগ বলা হয়। সাধারণত দ্রুতবর্ধনশীল বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল অর্থনীতির কাছে আকর্ষণীয় নীতিগুলোর অন্যতম কারেন্সি পেগ।

বিবৃতিতে ফেডের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও সতর্ক করে দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শক্তিশালী পারফরম্যান্স সত্ত্বেও পরের বছর জিসিসি ব্যাংকগুলোর মুনাফার অংকে কিছুটা অবনতি হতে পারে। কারণ চলতি বছরের ডিসেম্বরে সুদহার কমানো শুরু করতে পারে ফেড। সময়ও বেশির ভাগ জিসিসি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কারেন্সি পেগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করতে পারে।

এসঅ্যান্ডপি জানাচ্ছে, প্রতি ১০০ বেসিস পয়েন্টে সুদহার কমলে গড়ে ওই অঞ্চলের ব্যাংকগুলোর মুনাফা শতাংশ কমে আসবে।

পূর্বাভাসের জন্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জিসিসি ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করেছে এসঅ্যান্ডপি। এর সঙ্গে সামগ্রিক সম্পদের পরিমাণ এর সমান্তরালে সুদহারের পরিবর্তন কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সুদহার পরিবর্তনের সামগ্রিক প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে কয়েকটি বিষয়।ইতিবাচক উল্লেখ করে এসঅ্যান্ডপি বিবৃতিতে জানায়, সুদহার কমে গেলে গত দুই বছরে জিসিসি ব্যাংকগুলোয় খাতা-কলমে থাকা কিছু লোকসান কমতে পারে। কারণ প্রকৃতপক্ষে এগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। সুদহার কমানোর কারণে ২০২৫ সালে ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে ২৮০ কোটি ডলার। এটি জিসিসি ব্যাংকগুলোর মোট ইকুইটির গড় দশমিক শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে মাসিক মূল্যস্ফীতির ধীরগতি কয়েক মাস স্থায়ী না হলে সুদহার কমবে না বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি। তবে আগের দেখা পূর্বাভাসের চেয়ে একাধিক মাস দেরিতে ডিসেম্বরে প্রথমবার কমতে পারে মার্কিন সুদহার।

বিবৃতিতে আরা বলা হয়, ‘আমরা ধারণা করছি যে ২০২৫ সালের মধ্যে সুদহার ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দেবে ফেড, যা বছরের শেষে থেকে দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছবে।

তা সত্ত্বেও জিসিসি ব্যাংকগুলোর একাধিক উদ্যোগ সুদহার কমার সামগ্রিক প্রভাবকে প্রশমিত করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনাগত উদ্যোগ, সুদবিহীন আমানত বৃদ্ধি, সম্ভাব্য কম ঝুঁকি ঋণ নেয়ার পরিমাণে বৃদ্ধি।

মূলত মূল্যস্ফীতিকে শতাংশের ঘরে রাখার চেষ্টায় অগ্রগতি না হওয়ায় সুদহার স্থির রেখেছে ফেড। বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক প্যানেল ডিসকাশনে ফেড চেয়ারম্যান জেরেমি পাওয়েল জানান, বর্তমান সুদহার বজায় রেখেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে।

২০২২ সালে ব্যাপক মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেকর্ড মাত্রায় বাড়ানো হয় সুদহার। তবে চলতি বছর সংস্থাটি নীতি থেকে সরে আসবে বলে প্রত্যাশা ছিল অর্থনীতিবিদ মুদ্রাবাজার সংশ্লিষ্টদের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন