চুয়াডাঙ্গা ১০০ শয্যা হাসপাতাল

অস্থায়ী চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চুয়াডাঙ্গা ৫০ শয্যার সদর হাসপাতালকে ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে শয্যা বাড়লেও সে তুলনায় জনবল কম। হাসপাতালে প্রথম শ্রেণীর চিকিৎসকের ২২টি পদ থাকলেও স্থায়ী জনবল নেই ২১টিতে। এর মধ্যে নয়টি পদে অন্য হাসপাতাল থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাকি ১৩টি পদে চিকিৎসক নেই। এছাড়াও খালি রয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর বেশ কয়েকটি পদ। কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ রোগীদের।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহের কারণে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট পানিশূন্যতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। অথচ ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে চলছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল। প্রতিদিনই শয্যার তিন-চার গুণ বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে প্রথম শ্রেণীর চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ২১টি পদে স্থায়ী জনবল নেই। তবে সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক সার্জারি), মেডিকেল অফিসারের তিনটি পদ, ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার হোমিও এবং আয়ুর্বেদিক পদে অন্য হাসপাতালের চিকিৎসক সংযুক্ত করা হয়েছে। শূন্য রয়েছে সিনিয়র কনসালট্যান্ট চক্ষু, অ্যানেস্থেসিয়া, সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু, মেডিসিন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ইএনটি, রেডিওলজি এবং মেডিকেল অফিসারের পদ।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারি) ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন সিনিয়র কনসালট্যান্ট  হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন। এছাড়া দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৪ সাল থেকে সংযুক্ত রয়েছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) ডা. মো. আবুল হোসেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. হোসনে জারি তহমিনা। আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সংযুক্ত রয়েছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. মো. মাহবুবুর রহমান মিলন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) নুরে আলম আশরাফী। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কপপ্লেক্স থেকে সংযুক্ত রয়েছেন ডা. মো. আসাদুর রহমান মালিক। এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২০১৯ সাল থেকে তিনজন মেডিকেল অফিসার সদর হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন।

এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণীর ৬৭টি পদের মধ্যে নার্সিং সুপারভাইজারের দুটি পদই শূন্য। সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ রয়েছে ৫৪টি। এর মধ্যে ৫১ পদেই স্থানীয় জনবল নেই। অন্য হাসপাতালের নার্স দিয়ে পদগুলো পূরণ করা হয়েছে। দুটি পদে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া নার্স রয়েছেন। শূন্য রয়েছে একটি পদ। তৃতীয় শ্রেণীর জনবলের পদ রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে অফিস সহকারী, হেলথ এডুকেটর মেডিসিন টেকনিশিয়ান (ইকো) পদে স্থায়ী জনবল রয়েছে। বাকি পদগুলো পূরণ করা হয়েছে অন্য হাসপাতালের জনবল দিয়ে।

চতুর্থ শ্রেণীর ১৪৮টি পদের মধ্যে স্থায়ী জনবল রয়েছে চারটিতে। এছাড়া শূন্য রয়েছে ১১টি পদ। বাকি পদ পূরণ করা হয়েছে অন্য হাসপাতালের জনবল দিয়ে।

ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. উম্মে ফারহানা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১০০ শয্যার হাসাপাতাল হলেও ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। এখানে শয্যার বিপরীতে তিন-চার গুণ বেশি রোগী সবসময় ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে তাপপ্রবাহে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতাল থেকেই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হওয়ায় এর অধিক ভর্তি রোগীর খাদ্য চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ১০০ শয্যার জন্য তৈরি করা খাবার ওয়ার্ডের রোগীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে কয়েক দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে যে পরিমাণ জনবল আছে, সেটা দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। জনবল বাড়ানো হলে সেবা দিতে সুবিধা হতো। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন ওষুধ রয়েছে। রোগীদের সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন