যশোরে ১০ বছরেও হালনাগাদ হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

যশোর শহরে বেশকিছু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিপজ্জনক জেনেও এসব ভবনের কোনোটিতে মানুষ বসবাস করছে, আবার কোনোটিতে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। পুরনো এসব ভবনের প্লাস্টার ও ছাদ ধসে পড়লেও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হালনাগাদ তালিকায়ও নেই তাদের কাছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের তালিকা অনুযায়ী পৌরসভায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল ১৮০টি। এর মধ্যে ১২০টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরপর ১০ বছর পার হলেও তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড, সেন্ট্রাল রোড, জেল রোড, এইচএমএম রোড, এমএম আলী রোড, বড় বাজার, খালধর রোড, কাপুড়িয়া পট্টি, হরিণাথ দত্ত লেন, ষষ্ঠীতলা, পোস্ট অফিস পাড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল এলাকা, গুরুদাস বাবু লেন, বারান্দীপাড়া, মোল্যাপাড়া, বেজপাড়া ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় পুরনো জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে। অজ্ঞাত কারণে অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। এসব ভবনে মানুষ বসবাস ও ব্যবসা করছে। একাধিক ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। প্লাস্টার ও ছাদ খসে পড়ছে। তার পরও ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। ঝড় ও বর্ষা মৌসুমে জরাজীর্ণ এসব ভবন বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। কারণ ঝড়বৃষ্টিতে ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এসব জেনেও মানুষ সেখানে বসবাস করছে।

পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের এইচএমএম রোডের বড় বাজার এলাকায় জরাজীর্ণ একটি ভবন রয়েছে। ভবনের সামনে ও পেছনের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। সেখানে বাস করছেন মৃত খবির মিয়ার পরিবারের সদস্যরা। কাপুড়িয়া পট্টির মা দুর্গা জুয়েলার্সের সামনে পুরনো দুই তলা ভবন রয়েছে। যার নিচতলায় একাধিক দোকান ও দ্বিতীয় তলায় মানুষের বসবাস রয়েছে।

পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদ আব্বাস রাজ জানান, এসব ভবন যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিগগিরই এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন।

এছাড়া ঘোপ নওয়াপাড়া রোডে একাধিক জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে। কোনোটির বয়স ১০০ বছরের বেশি। এমন একটি ভবন ড্রিমডেল। এর একাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে। প্লাস্টার ও ছাদ খসে পড়ছে। ভবনে ছোট ছোট গাছ জন্মেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঝড়বৃষ্টির দিনে আশপাশের বাসিন্দাদের চিন্তা বেড়ে যায়। কারণ ড্রিমডেল ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য পৌরসভার কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত ও তালিকা তৈরির কাজে দীর্ঘদিন ধরে যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোনো তোড়জোড় নেই। জরাজীর্ণ ভবন মালিকদেরও এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০১৩ সালে পৌর এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল ১৮০টি। এর মধ্যে ১২০টি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে ৬০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে বারান্দীপাড়া, খালধর রোড, বড় বাজার, ঘোপ নওয়াপাড়া, সেন্ট্রাল রোড ও জেলরোড এলাকায়। এসব ভবন মালিকের মধ্যে বিরোধ ও ব্যবসায়ীদের মামলা চলমান থাকায় সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবনগুলো ভেঙে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে নতুন তালিকা তৈরি করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন