ডায়াগনোসিস প্রসেসগুলো দেশেই রয়েছে

হৃদরোগের চিকিৎসা করার জন্য বা হৃদরোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা অনেক জরুরি। আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশে হৃদরোগের সব ধরনের চিকিৎসা করাই সম্ভব হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন ধরনের ইনভেস্টিগেশন বা ডায়াগনোসিস প্রসেসগুলো আমাদের দেশে রয়েছে। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানাধীন যে হাসপাতালগুলো রয়েছে, এসবে যে ডাক্তাররা কাজ করছেন তারা দেশে ও দেশের বাইরে ট্রেনিং পাচ্ছেন। ট্রেনিং পেয়ে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন। 

হার্টের পরীক্ষাগুলো সাধারণত দুই ধরনের হয় —একটা হলো নন-ইনভেসিভ, শরীরের মধ্যে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি না ঢুকিয়ে যে কাজগুলো করা হয়। যেমন ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাফি, হল্টারমনিটরিং, ইটিটি। আর কিছু আছে ইনভেসিভ, যেখানে শরীরের ভেতরে কিছু না কিছু যন্ত্রপাতি প্রবেশ করানো হয়। যেমন করোনারি এনজিওগ্রাম, কার্ডিয়াক ক্যাথেলাইজেশন, ইলেকট্রোফিজিওলজিক্যাল স্টাডি। করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পর্কে বলি, এটা হলো হার্টের রক্তনালির ব্লক ধরার পরীক্ষা। আগে পায়ের রক্তনালির মধ্য দিয়ে করা হতো। কিন্তু এখন অধিকাংশ জায়গায়ই হাতের রগ বা হাতের রক্তনালি দিয়ে করা হয়। এটাকে বলা হয় রেডিয়াল এনজিওগ্রাম। রেডিয়াল পদ্ধতিতে এনজিওগ্রাম করার অনেক সুবিধা আছে। একটা মাত্র ক্যাথেটার দিয়ে যেহেতু এনজিওগ্রামটা করা হয়, এতে সময় কম লাগে, রেডিয়েশন এক্সপোজার কম হয়, পেশেন্ট রেডিয়েশন কম পান, এটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সহজেই রোগীরা সন্ধ্যা বা রাতের বেলা বাড়ি চলে যেতে পারেন। সব ধরনের ইন্টারভেনশন বা হার্টের রক্তনালিতে যে ষ্টেন্ট লাগাতে হয়, সেটা রেডিয়াল রুটে বা হাতের রক্তনালি দিয়ে সহজেই করা যায়। আমাদের এ হাসপাতালে দুটো ক্যাথল্যাব রয়েছে, পূর্ণাঙ্গ ক্যাথল্যাব, একটা সিমেন্স মেশিন, আরেকটা জিই মেশিন। এখানে আমরা সব ধরনের ইন্টারভেনশন করি, এনজিওগ্রাম, বাইট অ্যান্ড লেফট হার্ট ক্যাথেরাইজেশন, পার্মানেন্ট পেসমেকার, টেম্পোরারি পেসমেকার, আইসিডি, সিআরটি ইত্যাদি সব করা হয়। অ্যাডাল্ট বা বয়স্কদের করোনারি ইন্টারভেনশনের পাশাপাশি পেডিয়াট্রিক ইন্টারভেনশন হয়। ইলেকট্রোফিজিওলজি বা হার্টের যে ছন্দপতন সমস্যা তার চিকিৎসাও এখানে হয়, ইলেকট্রো ফিজওলজি স্টাডি ও এব্লেশন এটা তুলনামূলকভাবে একটা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে হার্টের বিভিন্ন চেম্বারের ভেতরে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। ক্যাথেটারগুলো প্যালপিটিশন বা বুক ধড়ফড়ের যে সমস্যাটা রোগীর হয় সেটা কৃত্রিমভাবে তৈরি করতে পারে, এটাকে বলা হয় ম্যাপিং। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্যালপিটিশনটা এক চেম্বার থেকে অন্য চেম্বারে যায়, সে জায়গাগুলো আইডেন্টিফাই করে ওগুলোকে অল্প টেম্পারেচারে পুড়িয়ে দেয়া হয়, এটাকে বলা হয় এব্লেশন। চিকিৎসাটি অত্যন্ত কার্যকর। আমাদের এখানে করোনারি ইন্টারভেনশন বেশি হয়, মাসে ৩০০-৪০০ কেস আমরা নিয়মিত করছি। প্রাইমারি করোনারি এনজিওপ্লাস্টি এটা খুব কমনলি হয়, যেসব রোগী হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ইমার্জেন্সিতে আসে, তাদের আমরা সরাসরি ক্যাথল্যাবে নিয়ে এনজিওগ্রাম বা এনজিওপ্লাস্টি করে ফেলি। এর বাইরে পার্মানেন্ট পেসমেকারও প্রচুর হয়। এছাড়া আইসিভি, সিআরটি এগুলোও আমরা প্রচুর করি। আরেকটু উল্লেখযোগ্য যে আমাদের কতগুলো অত্যাধুনিক ইনভেস্টিগেশন ফ্যাসিলিটিজ আছে, তার মধ্যে আছে এফএফআর বা ফ্র্যাকশনাল ফ্লো-রিজার্ভ এবং ইন্ট্রাভাসকুলার আল্ট্রাসনোগ্রাম, এটা স্টান্ট করার পরে রক্তনালিতে ঠিকভাবে স্টান্ট সেট হলো কিনা সেটা দেখাতে আমাদের সাহায্য করে।

আজকাল হার্টের চিকিৎসা বাংলাদেশে প্রায় পুরোটাই হয়। কার্ডিয়াক ট্রান্সপ্ল্যান্টে বা হার্টের প্রতিস্থাপন, যা ডিসিএম হৃদরোগে হৃৎপিণ্ডের যে প্রতিস্থাপন করা হয় সেটা আশপাশের কিছু দেশে চালু হয়েছে, আমাদের দেশে এখনো হয়নি। যদিও সার্জন টিম এখানে তৈরি আছে, ডোনার পাওয়াটা এখানে সমস্যা। হয়তো অদূরভবিষ্যতে এটা হয়ে যাবে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে কার্ডিয়াক ট্রান্সপ্লান্টেশন ছাড়া হৃদরোগের সব ধরনের চিকিৎসাই বর্তমানে বাংলাদেশে সম্ভব এবং সেবার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। হৃদরোগের চিকিৎসায় কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। সীমাবদ্ধতা বলতে একটা হচ্ছে করোনারি ডিভাইস বা বিভিন্ন কার্ডিয়াক সার্জারির যে ডিভাইস, এগুলোর সহজলভ্যতা বা দাম, প্রাইস যদি আরো কমানো যায় তাহলে এগুলো সাধারণ মানুষের চিকিৎসার আওতার ভেতরে চলে আসবে।

ড. মাহবুব মনসুর, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন