২০২১-২২ অর্থবছর

আয়করে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া

হাফিজুর রহমান

আয়কর থেকে রাজস্ব আদায়ে বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। ২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের বকেয়ার পরিমাণ (বিতর্কিত ও অবিতর্কিত) দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৮৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বকেয়া বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। জনবল সংকট, লজিস্টিকস স্বল্পতা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতাসহ নানা সংকটের কারণে বকেয়া থেকে পর্যাপ্ত আয়কর আয় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা।

সংস্থাটির ২০২১-২২ অর্থবছরে কর অঞ্চলভিত্তিক আয়কর দাবি ও দাবি আহরণের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় বিতর্কিত বকেয়ার পরিমাণই ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে অবিতর্কিত বকেয়া থেকেও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় হচ্ছে না। 

আয়কর থেকে রাজস্ব আয়ের জন্য এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটসহ ৩১টি কর অঞ্চল রয়েছে। এসব অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিটে। এনবিআর আয়কর রাজস্বের বেশির ভাগ আদায় করে এ ইউনিট থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ইউনিটে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। 

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অডিট করার পর বকেয়া নির্ধারণ করলে সেটা চূড়ান্ত বকেয়া হচ্ছে না। তবে ওই বকেয়ার ব্যাপারে করদাতাকে নোটিস দেয়ার পরও যদি কোনো সাড়া পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে এনবিআর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। সাধারণত কোম্পানি করদাতা এসব ক্ষেত্রে বসে থাকবে না। তারা অবশ্যই আপিল করবে বা ট্রাইব্যুনালে যাবে। যদি রায়ের পরও এনবিআরের পাওনা থাকে, তাহলে এনবিআর আইনগত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। এর পরও যদি দীর্ঘদিন ধরে না দিতে চায়, তাহলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দসহ একাধিক আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে এনবিআর। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছেও বকেয়া থাকতে পারে। সেসব ক্ষেত্রেও এনবিআরের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এনবিআরের নানাবিধ সংকট রয়েছে। এর মধ্যে জনবল সংকট, লজিস্টিকস স্বল্পতা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও আইন প্রয়োগের অভাব অন্যতম। যার ফলে বকেয়া থেকে পর্যাপ্ত আয়কর আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া আয়কর কর্মকর্তাদের প্রত্যেক বছরই রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে হয়। যে জন্য বকেয়া আদায়ের জন্য খুব বেশি সময় দিতে পারেন না কর্মকর্তারা। বকেয়া আদায় করতে এনবিআরের পক্ষ থেকে তাগাদাপত্র জারি করা হয়। এতে করদাতার সাড়া না পাওয়া গেলে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ, সার্টিফিকেট মামলা ও জরিমানা করা হয়। এর বাইরে বকেয়া থেকে রাজস্ব আয়ের তেমন কোনো উপায় নেই। 

২০২০-২১ অর্থবছরে আয়করে বকেয়ার পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৮৭৭ কোটি ৫৬৭ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে বকেয়ার পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৪২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৮৯৪ কোটি ২ লাখ টাকা। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয়কর থেকে রাজস্ব আয়ের জন্য ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর। এ লক্ষ্য আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এ অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের জন্য বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে এনবিআর। এসব কৌশলের মধ্যে অন্যতম বকেয়া থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানো। সেজন্য সব কর অঞ্চলকে বকেয়া আয়করের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। ওই তালিকা থেকে মাসিক ভিত্তিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আয়কর আয় বাড়াতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আয়কর আইন অনুসারে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন