বেজা প্রতিষ্ঠার এক যুগ

অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ৪৫ লাখ ডলার

বদরুল আলম

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা হয় ২০১১ সালের নভেম্বরে। সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করতে সংস্থাটির সময় লেগে যায় আরো চার বছর। এর পরের আট বছরে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারেনি বেজার অধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় সরাসরি বা প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মাত্র ৪৫ লাখ ডলার (সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী ৪৯ কোটি টাকার কিছু বেশি)। 

দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে পরিকল্পিত ও বিশেষায়িত শিল্প অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার। বেজাকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন, ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্দেশ্য থেকে। এজন্য ২০১০ সালে একটি আইন প্রণয়ন হয়। আর এ আইনের ভিত্তিতে পরের বছরের নভেম্বরে যাত্রা করে বেজা। শুরু থেকেই নানা বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সংস্থাটিকে। সীমিতসংখ্যক কর্মীবাহিনী নিয়ে সংস্থাটির সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করতে সময় লেগে যায় ২০১৫ সাল। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় দেশী বিনিয়োগকারীরা সাড়া দিলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে মূলত ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে। ওই অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিট এফডিআই প্রবাহ এসেছে সাড়ে ৩ লাখ ডলার। এরপর গত অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে নিট এফডিআই প্রবাহ আসে ২১ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর পরের প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে এসেছে ২০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় নিট এফডিআই প্রবাহ এসেছে ৪৫ লাখ ডলার।

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ না আসার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করতে না পারাকে দায়ী করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বেজার বক্তব্য হলো অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যা সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলেই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করা যাবে। 

পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ, কর্মসংস্থান ও শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। বেজার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এর মধ্যে ৯৭টির অনুমোদন হয়েছে। অনুমোদিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে ৬৮টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি। এর মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়ে এখন পর্যন্ত উৎপাদনে যেতে পেরেছে ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। নির্মাণাধীন রয়েছে ২৯টি। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় এ মুহূর্তে উৎপাদনরত কারখানা আছে ৪২টি। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের। এছাড়া নির্মীয়মাণ শিল্প-কারখানার সংখ্যা ৫০টি। এখন পর্যন্ত বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় মোট বিনিয়োগ হয়েছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) ডলার। এর ৯৯ শতাংশের বেশিই দেশী বিনিয়োগ। এছাড়া সরকারি পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন (২ হাজার ৩৯৭ কোটি) ডলার। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় দেশী-বিদেশী মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন (২ হাজার ৮৪৭ কোটি) ডলার। 

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিপুল পরিমাণ প্রস্তাবিত বিনিয়োগ হলেও প্রকৃত বিনিয়োগ এসেছে খুবই নগণ্য। মূলত অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ধীরগতি ও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশের ঘাটতির কারণে প্রকৃত বিনিয়োগ কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

তবে সামনের দিনগুলোয় অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগের মাত্রা বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন বেজাসংশ্লিষ্টরা। এছাড়া জাপান, ভারত ও চীনের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমও কম-বেশি এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। 

তবে সার্বিকভাবে দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর অগ্রগতি নিয়ে বিদ্যমান বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অসন্তোষ রয়েছে। তাদের মতে, দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ধীরগতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। উদ্যোক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ফলে বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। 

দেশে বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। মোট ৩৫টি দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে সংগঠনটি। দেশে মোট এফডিআই প্রবাহের ৯০ শতাংশই এসেছে এফআইসিসিআইয়ের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে। ব্যাংক ও আর্থিক খাত থেকে শুরু করে সিমেন্ট, সিরামিক, কেমিক্যাল, নির্মাণ ও আবাসন, পরামর্শ, এফএফসিজি, গ্যাস-বিদ্যুৎ, চামড়া ও চামড়াজাত, পোশাক, পরিবহনের মতো খাতগুলোয় বিনিয়োগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। সংগঠনটির পক্ষ থেকে গত বছরের মে মাসে দেশে বাস্তবায়নাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ দিয়ে একটি প্রকাশনা প্রকাশ করা হয়। 

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো স্থাপন হচ্ছে ধীরগতিতে। সরকার এখন পর্যন্ত ৯৭টি জোনের অনুমোদন দিয়েছে, যদিও এর মধ্যে পুরোপুরি চালু হওয়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) সংখ্যা খুবই কম। প্রস্তাবিত অঞ্চলগুলোর বেশির ভাগই সম্ভাব্যতা যাচাই, জমি অধিগ্রহণ ও অঞ্চলভিত্তিক সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাব চিহ্নিত করার পর্যায়ে রয়েছে। অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে জমিস্বল্পতা ও জটিল জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া।

বেজায় বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরা বলছেন, কোনো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলকেও যদি সফল ও কার্যকর হিসেবে দেখানো সম্ভব হতো, তাহলে এগুলোকে সব বিনিয়োগকারীর জন্যই বিনিয়োগ গন্তব্য ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সামনে তুলে ধরা সম্ভব হতো। আবার অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে প্রথম ধাপের অবকাঠামো উন্নয়নের গতিও অনেকটাই শ্লথ হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনগুলোরও আরো অনেক স্বচ্ছতা প্রয়োজন। পরিষেবা মূল্য নিয়েও প্রশ্ন আছে। পানিসংক্রান্ত নীতির বিষয়েও স্পষ্টতার প্রয়োজন আছে। 

জানতে চাইলে এফআইসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি রুপালী চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌কভিড মহামারী এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার একটা প্রভাব এখানে রয়েছে। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো যদি দেখি, সেখানে বিনিয়োগ কতগুলো এসেছে তা না দেখে যদি কতগুলো কোম্পানি এসেছে সেটা দেখেন, তাহলে দেখবেন মোটামুটি ভালোই এসেছে। অনেক অর্থনৈতিক জোনই কিন্তু প্রস্তুত। আমরা যদি বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী বা অন্য তিন-চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোপুরি প্রস্তুত করে এ নিয়ে যথাযথভাবে প্রচার করি, শোকেস করি, সেখানে বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করি; তাহলে বিনিয়োগ আসবে। এর পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে ফিসকাল পলিসির ওপর।’

তিনি বলেন, ‘‌প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যদি তুলনা করি, আমাদের ট্যাক্স সুবিধা দেয়া হচ্ছে ১০ বছরের জন্য। আর ভারতে দেয়া হচ্ছে জিএসটি সুবিধা, যা ভ্যাট সুবিধার সমতুল্য। ওরা বলছে তোমরা আসো বিনিয়োগ করো আর কর্মসংস্থান তৈরি করো। আমাদের এখানে বলা হচ্ছে ইউটিলিটি সারচার্জ দিতে হবে। এখন বিনিয়োগকারীরা তুলনা করে দেখবে ভারত বা প্রতিযোগী অন্য দেশগুলোয় এটা দিতে হয় না। সে ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন খরচ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে থেকে বেশি হয়ে যাচ্ছে। অনেকে ইন্ডিভিজ্যুয়ালি রেয়াত নেয়। কিন্তু আমাদের পলিসিটা হওয়া উচিত প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক। ভারতে ইউটিলিটি বিলে সাবসিডি দেয়া হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে আমাকে উল্টো বলা হচ্ছে সারচার্জ দিতে হবে। সামগ্রিকভাবে আমাদের ফিসকাল পলিসিটা আরো অনেক আকর্ষণীয় হওয়া উচিত।’ 

বেজার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বিদ্যমান বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে মেঘনা গ্রুপের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে বিদেশী বিনিয়োগের প্রকল্প ইউনিটের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে রয়েছে টিআইসি ম্যানুফ্যাকচারিং (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সেইজওয়ার্ক বাংলাদেশ লিমিটেড, সিকা বাংলাদেশ লিমিটেড এবং সান ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। 

আরেক বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন লিমিটেডে বিদেশী ইউনিটের সংখ্যা দুটি। এগুলো হলো বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড ও হান্টম্যান বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগ প্রসঙ্গে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মঈনুদ্দিন মোনেম বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগ প্রসঙ্গে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মঈনুদ্দিন মোনেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগ যা এসেছে তা সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম।  সব জোনেরই বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অবকাঠামো।  কোনো বিনিয়োগকারীই আসবে না যদি রিলায়েবল পাওয়ার না থাকে, গ্যাস না থাকে, ভালো কানেক্টিভিটি না থাকে।  যতগুলো জোন করা হচ্ছে তার অবকাঠামোগত দুর্বলতা রয়ে গেছে।  অবকাঠামোর দুটো দিক আছে—একটা অফসাইট, আরেকটা অনসাইট।  আমাদের গ্যাসলাইন এখনো আসেনি। আরইবির লাইনের মাধ্যমে যে পাওয়ার নিচ্ছি, তা ৩০ বছরের পুরনো লাইন। এগুলো আসছে শস্যখেত পার হয়ে। পাখি বসলেও এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বেসরকারি জোনে প্রায় সবাই কিন্তু রিলায়েবল পাওয়ার, সিমলেস কানেক্টিভিটি দিতে পারছে না। উপরন্তু তাদের অনেকগুলোই জমিসংক্রান্ত ঝামেলায় আছে। এখানে সরকারি প্রক্রিয়ায় ইকোনমিক জোনকে ভিন্নমাত্রায় দেখতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি, প্রধানমন্ত্রী এফডিআই সম্পর্কে খুবই সচেতন। কিন্তু আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মনে রাখতে হবে, তাদের কাজ সুবিধা দেয়া, একটি বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করে দেয়া, বাণিজ্য করা নয়। সরকারি খাত যেদিন থেকে মনে করবে, দেশ গড়ার জন্য আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সুবিধা দেয়াই আমাদের কাজ; সেদিন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১০০টি জোন হয়ে যাবে।  সামষ্টিক প্রয়াস ও সমন্বয়ের মাধ্যমে এ কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিতে হবে।’

বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল বে ইকোনমিক জোনে বিদেশী বিনিয়োগকারী মেইগো বাংলাদেশ লিমিটেডের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প পরিচালনার উদ্যোগ রয়েছে আরেক বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল হোসেন্দি ইকোনমিক জোনে। 

তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো আশাবাদী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা। সংগঠনটির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘সরকারের ১০০ এসইজেড বাস্তবায়নে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রথমত আমাদের সীমিত ভূমির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। দ্বিতীয়ত, লক্ষ্যভিত্তিক অবকাঠামো নির্মাণের কারণে উৎপাদনশীলতাও বাড়বে। একই সঙ্গে অর্জন হবে কমপ্লায়েন্স মানও। বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে ভূমির সীমাবদ্ধতা বা ইউটিলিটি সংযোগের মতো যেসব দুর্বলতার কথা উঠে এসেছে, সেগুলোও দূর করা যাবে। স্বীকার করছি, মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ায় এসইজেডগুলো বাস্তবায়নের গতি কিছুটা ধীর হয়েছে। তবে নানা জটিলতা সত্ত্বেও মিরসরাইয়ের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আড়াইহাজার এসইজেডের কাজও ভালোই এগিয়ে চলেছে। আমাদের প্রত্যাশা, এসইজেডগুলোর মধ্যে গড়ে তোলা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করবে, যা অন্যান্য স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও বাংলাদেশে আকর্ষণ করে নিয়ে আসবে।’

বেজার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিডকালেও বেজায় উল্লেখযোগ্য বিদেশী বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাব দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস, চীনের জিয়াংসু ইয়াবাং ডাইস্টাফ, জাইহং মেডিকেল প্রডাক্টস, সিসিইসিসি বাংলাদেশ লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়ার এইচএ টেক লিমিটেড, রামকি এনভায়রো সার্ভিসেস, জার্মানির সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে ভারতের ফরটিস গ্রুপ, নেদারল্যান্ডসের লিজার্ড স্পোর্টস এবং সিঙ্গাপুরের ইন্ট্রা-এশিয়া গ্রুপ। 

জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘একটি কারখানা গড়ে তুলতে প্রচুর সময় লাগে। তার পরও অল্প সময়ের মধ্যে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল মিরসরাইয়ে ছয়টি, শ্রীহট্টতে দুটি বিদেশী উদ্যোগ পাওয়া গেছে। দ্রুতই আরো তিন থেকে চারটি প্রকল্প চালু হবে। এছাড়া বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলেও বিদেশী উদ্যোগে শিল্প প্রকল্প রয়েছে। এগুলো কোনোভাবেই কম অর্জন না। একটা শিল্পাঞ্চল তৈরি করতে প্রচুর সময় লাগে। ইকোনমিক জোনের ধারণাটির কেন্দ্রে ছিল স্থানীয় ও বিদেশী দুই ক্ষেত্র থেকেই বিনিয়োগ আকর্ষণ। এক্ষেত্রে কোনো অগ্রাধিকারের বিষয় নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন