দানকৃত অর্থের বিপরীতে ১২ কোটি টাকা কর দাবি করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নোটিস দিয়েছিল এনবিআর। নোটিসগুলোর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পৃথক তিন আয়কর রেফারেন্স মামলা করেছিলেন তিনি। মামলা তিনটি গতকালই খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আবেদনগুলো খারিজ হয়ে যাওয়ায় এ কর পরিশোধ করতে হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন।
এনবিআরের নোটিসগুলোর বৈধতা নিয়ে শুনানি শেষ হয় গত ২৩ মে। এরপর রায় ঘোষণার জন্য গতকালের দিনটি নির্ধারণ করেছিলেন হাইকোর্ট। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন প্রতিষ্ঠানে ৭৭ কোটি টাকা দান করেছিলেন। তিনি বলেছেন, এর বিপরীতে কর দিতে হবে না। আমরা বলেছি দিতে হবে। এ কারণে এনবিআর তাকে নোটিস দিয়েছিল। পরে তিনি হাইকোর্টে তিনটি রেফারেন্স মামলা করেছিলেন। আবেদনগুলো খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এখন এনবিআরের দাবীকৃত কর দিতে হবে। এনবিআর ১৫ কোটি টাকার বেশি দাবি করেছিল। এরই মধ্যে তিনি ৩ কোটি টাকার মতো দিয়েছেন। এখন বাকি ১২ কোটি টাকার বেশি কর পরিশোধ করতে হবে।
এএম আমিন উদ্দিন আরো বলেন, ‘তিনি (ড. ইউনূস) বলেছেন, টাকা দান করেছেন, তাই কর অব্যাহতি পাবেন। আর আমরা বলেছি, কর অব্যাহতির যেসব কারণ উল্লেখ করা আছে সেগুলোর মধ্যে ড. ইউনূসেরটা পড়ে না। এজন্য তাকে দানকর দিতে হবে।’
মামলায় বলা হয়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-১২ করবর্ষে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কর দাবি করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নোটিস পাঠিয়েছিল এনবিআর। ২০১২-১৩ করবর্ষে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে দানকর দাবি করা হয়েছিল ১ কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা। ২০১৩-১৪ করবর্ষে ৭ কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে ১ কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিস দেয়া হয়।
দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের এসব নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ড. ইউনূস। ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এরপর ২০১৫ সালে তিনি হাইকোর্টে তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা করেন। ওই মামলাগুলোর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিসের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
