আমদানি বিপর্যয়ে বিপাকে যশোরের ফল ব্যবসায়ীরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

যশোরের বাজারে দোকানে সাজিয়ে রাখা ফল ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ডলার সংকটে চাহিদা অনুযায়ী ফল আমদানি করতে পারছেন না যশোরের ৬০০-এর বেশি ব্যবসায়ী। রমজানে ফলের চাহিদা থাকলেও আমদানি না করতে পারায় বিপাকে রয়েছেন তারা। উচ্চমূল্যে আমদানি করেও অনেকে ফল বিক্রি করতে পারছেন না। ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, রমজানে ফলের দাম ক্রেতাদের নাগালে রাখতে হলে শুল্ক কমাতে হবে।

যশোর জেলা ফল ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে ব্যবসায়িক মন্দা চলমান। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলছে চরম ডলার সংকট। এক বছর ধরে ফল আমদানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বর্তমানে ডলারের রেট যাচ্ছে ১১২-১১৫ টাকা, যা আগে ছিল ৮২ টাকা। এর পরও আমদানি করার জন্য এলসি খুললে সেই পণ্য আসতে সময় লাগে কমপক্ষে ২৫ দিন। এতে ডলার রেট বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।

যশোরের ফল আমদানিকারক আনসারি হোসেন সোহেল জানান, গত করোনার পর থেকে আমরা ফল আমদানি করতে পারছি না। এখন ডলারের সংকটে বেশির ভাগ ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না। কিছু ব্যাংক এলসি দিলেও বেশি আমদানির সুযোগ দিচ্ছে না। অল্প পরিসরে আমদানি করতে হচ্ছে। যে কারণে ডলার ১১৫ টাকায় কিনে এলসি করে দাম পড়ে যাচ্ছে অনেক বেশি। দেশে আনার পর বিক্রি করা যাচ্ছে না। এক আড়তদার জানান, তারা আমদানিকারকদের কাছ থেকে ফল নিয়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করেন। কিন্তু দু-তিন বছর ধরে অবস্থা বেগতিক। এখন ফলের মৌসুম। আঙুরের কেজি ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০ টাকা। কালো আঙুর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ২৫০ টাকা। এভাবে সব ফলের দাম বাড়ছে। বেশি দামের কারণে ক্রেতারাও কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। যা বিক্রি হচ্ছে তাতে সব মিলিয়ে লোকসান হয়ে যাচ্ছে।

যশোর জেলা ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘‌যশোরে ৬০০-এর বেশি ফল ব্যবসায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে আড়তদার ২০০ জন। আমদানিকারক আছেন কমপক্ষে ২০ জন। এ পেশার সঙ্গে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ জড়িত। এক বছরে আমদানিকারকরা ডলার সংকটে ফল আমদানি করতে পারছেন না। কিছুদিন হলো রমজানকে সামনে রেখে খেজুর ও অন্যান্য ফল আনছেন। আগে এক ক্যারেট আঙুর আনতে সরকারকে রাজস্ব দিতে হতো ১ হাজার ২০০ টাকা, সেখানে এখন দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। বেদানা ৮০০ টাকার জায়গায় এখন ২ হাজার টাকা, আপেল ৬০০ টাকার জায়গায় ১ হাজার ২০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর (পাঁচ কেজি) আগে ২ হাজার ২০০ টাকা দিতে হলেও এখন ৩ হাজার ৫০০ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে। যে কারণে সব ফলে দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ফল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, এলসি করতে না পেরে আমদানিকারকরা সবাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রমজানে ফল বেশি আমদানি না হলে ক্রেতারা সুফল পাবেন না। সবাই বেশি দামে ফল কিনবে না। বাজার সহনীয় রাখতে সরকারকে ফল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন