প্রবৃদ্ধি কমলেও এশিয়ার প্রযুক্তি খাত পুনরুদ্ধারের আশা

বণিক বার্তা ডেস্ক

তাইপেতে বার্ষিক কম্পিউটেক্স কম্পিউটার প্রদর্শনীেত একজন দর্শনার্থী ছবি: এএফপি

কয়েক বছরে স্টার্টআপ থেকে শুরু করে প্রযুক্তি জায়ান্টরা ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠান কম প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছে। ২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগ ও চুক্তি বৈশ্বিকভাবে অনেক নিচে নেমে গেছে। কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগে এমন পতন আগে দেখা যায়নি। বিনিয়োগে এ শ্লথগতি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে আঘাত করলেও এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর দ্য স্ট্রেইটসটাইমস।

বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ২০২২ সালে উদীয়মান অর্থনীতি ও বড় আয়ের এশিয়ান দেশগুলোয় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে ভারত ও চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে প্রযুক্তিকর্মীদের ছাঁটাই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন কারণে প্রযুক্তি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আক্রমণাত্মক নীতি, কভিড-১৯-পরবর্তী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় দেশগুলোর বিভিন্ন উদ্যোগ, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন এবং খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চমূল্য উল্লেখযোগ্য। ২০২১ সালকে প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের বছর বলা হলেও ২০২২ সাল সে ধারার বাইরে।

গত বছরের আসিয়ান ইনভেস্টমেন্ট প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে ভিসি বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে। ২০২২-এর মাঝামাঝি এসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ২০১৫-২০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। যা চীন ও ভারতের তুলনায় বেশি। এটি আসিয়ান অঞ্চলে দুর্দান্ত উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকেই চিহ্নিত করে। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের এ বিনিয়োগের কারণে অঞ্চলটিতে ৪০-এর বেশি ইউনিকর্নের যাত্রা হয়। যাদের সামগ্রিক বাজারমূল্য ১ কোটি ডলারের বেশি।

আসিয়ানে ভিসির বিনিয়োগের বড় অংশ উদ্ভাবনের অন্যতম হাব সিঙ্গাপুর ও বড় বাজার ইন্দোনেশিয়াকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে বিনিয়োগ বাড়ছে। ২০২২ সালে বিনিয়োগ কমতে থাকে। আসিয়ান স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বিতীয় প্রান্তিকে যে অর্থ জমিয়েছিল তা আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম ছিল।

বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে বিনিয়োগকারী ও প্রথম পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক নয়। মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে কোনো পূর্বাভাসও দেয়া যাচ্ছে না। এত বিপত্তি সত্ত্বেও এশিয়ার বাজার নিয়ে খুব বেশি হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। অঞ্চলটিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রভাব রয়েছে। ২০২২-২৩ সালে আসিয়ানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এর মাধ্যমে অঞ্চলটি প্রথমবারের মতো চীনকে ছাড়িয়ে যাবে।

শুধু জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত এশীয় অর্থনীতি নয়, চীন ও ভারতের মতো বড় উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে তুলনায় বিনিয়োগকারীদের কাছে আসিয়ান এখনো কম পরিচিত। আসিয়ানভিত্তিক প্রাইভেট ইকুইটি ও ভিসি ফার্মগুলো স্টার্টআপ এবং আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমে অর্থায়নে ক্রমবর্ধমান উৎসের সন্ধান করছে। অঞ্চলটির অধিকাংশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ও ফান্ডের সদর দপ্তর সিঙ্গাপুরে। তবে আসিয়ানের অন্য দেশগুলোতেও কার্যক্রমের পরিধি বিস্তারের সুযোগ রয়েছে। আসিয়ানের প্রতিটি সদস্য দেশের প্রদেশ ও অঞ্চলে উদ্ভাবনের ইকোসিস্টেমের জন্য যে সহায়তা প্রকল্প রয়েছে সেটি এ কার্যক্রমের গতি বাড়াবে।

বিভিন্ন পলিসির মধ্যে ব্যক্তিগত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা এবং উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয় অন্তর্গত। এছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন ইনোভেশন হাবের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে তোলাও উল্লেখযোগ্য।

আসিয়ান অঞ্চলে ডিজিটাল অর্থনীতিও দ্রুত বাড়ছে। গুগলের সাম্প্রতিক ই-ইকোনমি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ডিজিটাল ইকোনমির গ্রস মার্চেন্ডাইজ ভ্যালু ২০ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। গত তিন বছরে অঞ্চলটিতে ১০ লাখের বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে। এছাড়া ই-কমার্স ও ফিনটেক ব্যবসার পরিধিও বাড়ছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ব্যবসা বিস্তারসহ আসিয়ানের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের যে ধরনের পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে সেগুলো যেন নীতি কার্যকরে বাধা না দেয় সেটি নিশ্চিতের কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। যেসব উদ্যোক্তা উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন আসিয়ানের সমন্বিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে তারা আরো লাভবান হবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একীভূতকরণে বর্ধিত ব্যবস্থা দক্ষতা উন্নয়ন, মেধাবীদের নিয়োগ প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয় বৈশ্বিকভাবে বিনিয়োগের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েক দশকের মধ্যে আসিয়ান উদ্ভাবনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সব সমস্যা সমাধানের কথাও জানান তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন