বাংলাদেশকে বিদেশী স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হবে না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের স্যাটেলাইট পরিবারের ৫৭তম গর্বিত সদস্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আর বিদেশী স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, স্মার্ট জাতি গঠন করা।

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় মেলার আয়োজন করে। দেশের আইটি আইটিইএস পণ্য সেবা প্রদর্শনই আয়োজনের লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, রোবোটিকস, বিগ ডাটা প্রভৃতি ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে চাই।

বাংলাদেশে ডিজিটাইজেশনের বিপ্লব ঘটে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন রচিত হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলে ফাইভজি সেবা নিশ্চিত করা হবে। বিনিয়োগ রফতানি ক্ষেত্রে ডিজিটাল পণ্য অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমি আশা করি। ডিজিটাল কানেক্টিভিটিই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার। কানেক্টিভিটির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠবে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট স্মার্ট সোসাইটি।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। ২০১৮ সালে আমরা মহাশূন্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- উেক্ষপণ করি। এর মাধ্যমে ব্রডকাস্টিং থেকে শুরু করে টেলিযোগাযোগের সব খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আর বিদেশী স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হয় না। অন্যদিকে স্যাটেলাইটের অব্যবহূত তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে ৫৭তম স্যাটেলাইট পরিবারের গর্বিত সদস্য। গত বছর সিলেট, সুনামগঞ্জ নেত্রকোনায় ভয়াবহ বন্যা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্রুততম সময় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- উেক্ষপণের কার্যক্রমও হাতে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার সাবমেরিন কেবল- স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ হাজার ৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি আরো হাজার ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি বেড়ে মোট হাজার ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটিতে উন্নীত হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, সাবমেরিন কেবল থেকে পাওয়া ব্যান্ডউইডথ সৌদি আরব, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া ভারতে লিজ দিয়ে বাংলাদেশ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। তৃতীয় সাবমেরিন কেবল ২০২৪ সালের মধ্যে স্থাপিত হবে। তখন ক্যাপাসিটি বেড়ে ১৩ হাজার ২০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে।

অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম খাতে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২টি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি পর্যায়ে ১৪টি ক্যাটাগরিতে প্রথম প্রবর্তিত পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক, টেলিযোগাযোগ তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এবং ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, এটাই শেষ ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা। ভবিষ্যতে আয়োজন করা হবে স্মার্ট বাংলাদেশ মেলা। তিনদিনের মেলায় ৫২টি প্যাভিলিয়ন ৭৭টি স্টলে নিজেদের প্রযুক্তি কার্যক্রম তুলে ধরছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আয়োজকরা জানিয়েছেন, সবার জন্য উন্মুক্ত মেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রযুক্তি সক্ষমতা স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রার প্রস্তুতির তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), রোবোটিকস, বিগ ডাটা ব্লক চেইন প্রযুক্তির বিভিন্ন উদ্ভাবন প্রদর্শন করা হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) চশমা পরে মেলা প্রাঙ্গণ থেকেই দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভার্চুয়ালি ঘুরে দেখতে পারছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন