বাজার নিয়ন্ত্রণ নয় স্থিতিশীল রাখতে চাই: বাণিজ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ নয় বরং স্থিতিশীল রাখতে চান বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আজ সোমবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত 'বিএসআরএফ সংলাপ'-এ তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংলাপের উপস্থাপনা করেন সাধারন সম্পাদক মাসউদুল হক।

ভোজ্য তেলের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ীকে আমরা ধরছি। সেটি ধরে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করছে ভোক্তা অধিকার। সেখানে অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে এবং জেলেও পাঠানো হয়েছে। তবে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইনা যাতে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। রমজান মাসটা সংজমের মাস। ব্যবসায়ীরা জানে ঈদের পর দাম বাড়বে তারা সেই সুযোগ নিয়েছে। তবে আমাদের ভুল হয়েছে টানা দুই মাস তেলের দামটা নির্ধারণ করিনি, যদি করতাম তাহলে তারা সুযোগটা নিতে পারত না। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা বেড়েছিল। তাই সেটি আগে নির্ধারণ করলে সমস্যাটা হত না।

ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। আমরা ব্যবসায়ী বান্ধব। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুযায়ী দাম ফিক্সআপ করে দেই। সে অনুযায়ী বাজারে দামটা থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না, বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাই।

পেঁয়াজের বিষয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজের আইপি বন্ধ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষকরা যাতে দাম পায় সেটি দেখতে হবে। আমরা দেখছি কৃষকরা যাতে অন্তত ২৫ টাকা পায়। বাকি ট্রান্সপোর্টসহ অন্য খরচ মিলে ঢাকার মানুষ ৪৫ টাকায় যাতে খেতে পারে। কৃষকরা যাতে দাম পায় এবং ভোক্তারাও যাতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে সেটি আমরা দেখছি।

সীমান্ত হাট সম্পর্কে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথা বলেছিলাম এ বিষয় নিয়ে। আশা করছি তিন চারটি প্রপোজাল দেব। মিজোরামে গিয়েও আলোচনা হয়েছে। ছোট রাজ্য হলেও তারা এটি খুব পজিটিভলি দেখছে। একটা সাজেকের কাছাকাছি আরেকটি ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটি নিয়ে দ্রুত দেখতে। 

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রনের যুদ্ধ অনেকটা প্রভাব ফেলেছে আমাদের খাদ্য পণ্যের ওপর। সেজন্য সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। সামনের দিকে কিছুটা সংকট রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আশেপাশের শ্রীলংকার অবস্থা দেখে অনেকে প্রচার করছে সে অবস্থা হতে পারে। সেরকম কোনো সম্ভবনা নেই। আমরা নিজেরাই শ্রীলংকাকে ঋণ দিয়েছি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অবস্থা ভালো থাকলে দেশের অবস্থাও ভালো থাকে। আমি বৈশ্বিক সমস্যার মধ্যে আছি। তেল, চিনি, ডালের দাম নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। তেলের ৯০ ভাগ আমাদের আমদানি করে আনতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের প্রভাব হলে আমাদের দেশেও দাম বেড়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি পণ্য আছে যেগুলো আমরা মনিটর করি। ঈদের আগে তেলের দাম নিয়ে অনেক কথা এসেছে। আমাদের মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে একবার বসে ট্যারিফ কমিশন এই প্রাইজিংটা করেন। সবকিছু এভারেজ করে দামটা নির্ধারণ করা হয়। আমাদের একটা বিশেষ কারণ ছিল, ঈদের মাসটাতে আমরা দামটা বাড়াতে চাইনি। ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম এ সময়টা ম্যানেজ করেন। তাই যেই সময়ে দামটা ফিক্স করা হয় সেখানে কিছুটা বিলম্ব হয়। যেহেতু তারা ভেবেছিল ঈদের পর দামটা বাড়বে। সেজন্য অনেকে তেল জমিয়ে রেখেছিল।

মন্ত্রী বলেন, এ মূহুর্তে পেঁয়াজের দাম একটু চড়া। তবুও দাম মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। পেঁয়াজের দাম যদি কৃষক ২৫ টাকা পায় তাহলে তাহলেও মোটামুটি পোষানো সম্ভব হয়। পরে সেটির সঙ্গে ট্রান্সপোর্টসহ কিছু কস্টিং যুক্ত হয়। আমরা কিছু কিছু ভালো কাজ করতে পেরেছি।এ বছর আমরা ৬০০ কোটি ডলার পণ্য রফতানি করতে পারব বলে আশা করছি। ২০২৪ সালে ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করতে পারব বলে আশা করছি। ১৫০টির বেশি দেশে ফার্মাসিটিক্যাল পণ্য পাঠাতে পারছি। অন্যদিকে ইথিউপিয়া ৯০ শতাংশ এসব পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করে। গার্মেন্টস সেক্টরে আরো ১০ লাখ কর্মী যুক্ত হবে বলে আশা করছি।

এসময় অন্যদের মধ্যে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মেহ্দী আজাদ মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ সুমন, সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, হাসিফ মাহমুদ শাহ উপস্থিত ছিলেন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন