রোজ গার্ডেনের পুরনো ভবনে স্থানান্তর হচ্ছে ঢাকা নগর জাদুঘর

আল ফাতাহ মামুন

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের পাঁচতলায় অবস্থিত ঢাকা নগর জাদুঘরটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ওয়ারীর রোজ গার্ডেনের একটি পুরনো ভবনে এটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যে ভবনে জাদুঘরটি স্থানান্তর করা হচ্ছে সেটি বয়স বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ইতিহাসবিদরা বলছেন, যথাযথভাবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে আরো বেহাল হয়ে পড়তে পারে জাদুঘর।

মুনতাসীর মামুন এবং হাশেম খানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৮৭ সালের ২০ জুন পুরান ঢাকার পাঁচ ভাই লেনের একটি বাড়িতে জাদুঘরটির জন্ম। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে তখনকার মেয়র হানিফের আগ্রহে সেটি নগর ভবনে স্থানান্তরিত হয়। একই বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির উদ্বোধন করেন। উদ্দেশ্য ছিল, ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে মানুষকে জানানো। কিন্তু নগর ভবনের ভেতরে জাদুঘরটি হওয়ায় সেখানে আশানুরূপ দর্শনার্থী উপস্থিত হয়নি। তাছাড়া জাদুঘরটির তথ্যও সেভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেনি। এসব নানা কারণে জাদুঘরটি বর্তমান স্থান থেকে সরিয়ে প্রকাশ্য কোনো স্থানে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ইতিহাসবিদরা। যার পরিপ্র্রেক্ষিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় রোজ গার্ডেনের আবাসিক ভবনের তৃতীয় তলায় জাদুঘরটি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে জাদুঘর স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এজন্য দর্শনার্থীদের জাদুঘরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, রোজ গার্ডেনের মালিক যে তিনতলা ভবনটিতে বাস করতেন সেখানেই স্থানান্তর করা হচ্ছে নগর জাদুঘর। রোজ গার্ডেন প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৩১ সালে। সে হিসেবে আর নয় বছর পরই ভবনটি শতবর্ষে পা রাখবে। সাধারণত কোনো ভবনের বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গেলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে অর্থে রোজ গার্ডেনের পুরনো ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও এখন পর্যন্ত ভবনটিতে কোনো দুর্ঘটনা বা সমস্যার কথা জানা যায়নি।

স্থানান্তর কমিটির এক সদস্য বণিক বার্তাকে বলেন, যে ভবনে নগর জাদুঘর সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, সেটি জাদুঘরের আদলে গড়া ভবন নয়। ভবনটি ভেঙে একটি আধুনিক ভবন নির্মাণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে কোটি টাকার একটি বাজেট দেয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কোটি টাকার অনুমোদন দিয়ে আপাতত স্থানান্তর কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছে।

জাতীয় জাদুঘরের কিপার (সম) . বিজয় কৃষ্ণ বণিক বলেন, জাদুঘরটি আগে নগর ভবনের তত্ত্বাবধানে ছিল। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এটিকে রোজ গার্ডেনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নগর ভবন থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে জাদুঘর স্থানান্তরের বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের সহযোগিতা করতে বলেছে, আমরা তা দিচ্ছি। তবে ব্যাপারে লিখিত কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

. বিজয় কৃষ্ণ বণিক আরো বলেন, যে ভবনে স্থানান্তর করা হচ্ছে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বলতে এমন নয় যে সেখানে দর্শনার্থীরা গেলে তা ভেঙে পড়বে বা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। বরং মেয়াদোত্তীর্ণের দিক থেকে বা বয়স বিবেচনায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া জাদুঘরের জন্য যে আদলের ভবন হওয়া দরকার ভবনটি সে রকম নয়।

নগর ভবন জাদুঘরটি খোলা জায়গায় স্থানান্তরের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান ঢাকা গবেষক . শরীফ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, রোজ গার্ডেনে স্থানান্তরের ফলে যদি নিদর্শনগুলো নষ্ট হয়ে যায় বা আগের মতোই দর্শনার্থীশূন্য থাকে, তাহলে স্থানান্তরের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। পাশাপাশি নতুন ঢাকার মানুষজন যেন নগর জাদুঘর ভ্রমণ করতে পারে, সেজন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে যাতায়াত পথটা যেন সুন্দর নির্বিঘ্ন হয়। তাহলেই নতুন ঢাকার মানুষ তাদের শেকড়ের কথা জানতে পারবে।

ঢাকা নগর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ঢাকা নগরীর স্মৃতিসংক্রান্ত জানা-অজানা নানা বিষয়। এখানে রয়েছে ঢাকার ইতিহাসসংবলিত ১০১টি দুর্লভ আলোকচিত্র। এছাড়া ঢাকার প্রথম ছাপাখানা নবাবি আমলের হুক্কা, উনিশ শতকে ঢাকার নবাবদের ব্যবহূত নানা সামগ্রী, মোগল আমলের বিভিন্ন দলিল, ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি সংবাদপত্র সাপ্তাহিক ঢাকা নিউজের মুদ্রণযন্ত্রসহ নানা কিছু সংরক্ষিত রয়েছে জাদুঘরে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন