কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১

উৎস থেকেই বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহের নির্দেশনা জারি

আল ফাতাহ মামুন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সাধারণত বর্জ্যের প্রকৃতি বা ধরনের ওপর ভিত্তি করে এগুলো নির্ধারিত পাত্রে বা স্থানে ফেলা হয়। এরপর ধরন অনুযায়ী তার ব্যবস্থাপনা করা হয়। তবে বাংলাদেশে এতদিন ধরনভেদে বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনার কোনো পদ্ধতি ছিল না। দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধাই ছিল উৎস থেকে আলাদাভাবে বর্জ্য সংগ্রহ না করা। এবার সে সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে। পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক গেজেটের মাধ্যমে উৎস থেকে আলাদাভাবে বর্জ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিধিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা আরো সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ২৩ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ নামে গেজেট জারি করে। সেখানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এলাকায় বসবাসরত বর্জ্য সৃষ্টিকারী ব্যবহারকারীদের নিজের কর্মস্থল বা আবাসস্থলে সৃষ্ট বর্জ্য ফেলার জন্য স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে পচনশীল, অপচনশীল গার্হস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ কঠিন বর্জ্য আলাদাভাবে ভিন্ন ঢাকনাযুক্ত তিনটি পাত্রে সংরক্ষণ করে দায়িত্বরত বর্জ্য সংগ্রহকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে দিতে হবে।

বর্জ্যের কোনো অংশ উন্মুক্ত না রাখার যৌক্তিকতা উল্লেখ করে গেজেটে বলা হয়, উন্মুক্ত বর্জ্য পশুপাখির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাছাড়া থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এসব বর্জ্য বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ বর্জ্যের সঙ্গে থাকা তরল পদার্থ চুইয়ে পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। অবকাঠামো নির্মাণ থেকে সৃষ্ট বর্জ্য স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার আগ পর্যন্ত এমন প্রক্রিয়ায় আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যেন ওই বর্জ্য থেকে ধুলোবালি বাতাসে ছড়াতে না পারে এবং বৃষ্টির পানির মাধ্যমে বর্জ্যের অংশ ড্রেনের পানিতে মিশে না যায়।

গেজেটে একক বা সম্মিলিতভাবে সৃষ্ট বর্জ্য নিজের আঙিনার বাইরে রাস্তা, খোলা জায়গা, ড্রেন বা পানিতে ফেলা কিংবা আগুনে পোড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, পার্ক, স্টেশন, টার্মিনাল বা জনসমাগমস্থলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ছাড়া যেখানে-সেখানে কঠিন বর্জ্য ফেলা যাবে না। একইভাবে দোকান, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার অন্যান্য আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা জমা করে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে। এসব বর্জ্য পানিতে ফেলা কিংবা আগুনে পোড়ানো যাবে না। পাশাপাশি বর্জ্যের জন্য প্লাস্টিক ব্যাগও ব্যবহার করা যাবে না।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পাদন করবে। এক্ষেত্রে কঠিন বর্জ্য তিনটি আলাদা শ্রেণীতে সংগ্রহের আগ পর্যন্ত আবাসস্থল বা প্রাঙ্গণে আলাদা পাত্রে সংরক্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করার পাশাপাশি নজরদারিও করবে। এছাড়া আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কাঁচাবাজার, মাছ বা ফলের বাজার কসাইখানা থেকে পচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে আলাদাভাবে কম্পোস্টিং বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

গৃহস্থালি থেকে সৃষ্ট কঠিন বর্জ্য নালা-নর্দমা থেকে উত্তোলিত কঠিন বর্জ্য, মল, বিষ্ঠা, সংগ্রহ করে যথাযথভাবে ঢেকে রাখতে বিধিমালায় বলা হয়েছে। এরপর এসব বর্জ্য সরাসরি চূড়ান্ত অপসারণক্ষেত্রে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে চিকিৎসা বর্জ্যের ক্ষেত্রে চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণ করতে হবে। কঠিন বর্জ্য অপসারণের জন্য যখন ল্যান্ডফিলে নেয়া হবে, তখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যবহূত গাড়িতেও তিনটি আলাদা প্রকোষ্ঠ থাকার কথা বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে পরিবহনের সময় কঠিন বর্জ্য অন্য বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যাবে না। সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কঠিন বর্জ্য নির্দিষ্ট মানমাত্রা বজায় রেখে প্রক্রিয়াকরণ, পুনর্ব্যবহার উপযোগীকরণ চূড়ান্তভাবে অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থাও স্থানীয় সরকারকে করতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (আইন) খোন্দকার মো. ফজলুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, এতদিন আমাদের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ছিল না। এখন সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এর মাধ্যমে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হবে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা বাস্তবায়িত হলে পরিবেশ দূষণ যেমন কমবে, পাশাপাশি বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর আরো সহজ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন