অফিসে ফেরার পরিকল্পনায় ওমিক্রনের বাধা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ওমিক্রন সংক্রমণের শঙ্কায় আরো কিছুদিন হয়তো কর্মীবিহীন থাকতে হবে অফিসগুলোকে ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের অংশ হিসেবে শুরুতেই লকডাউনে চলে গিয়েছিল বিশ্বের দেশগুলো। শুরুতে বেশ কিছুদিন জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে মানুষ। শুরু হয় বাড়িতে বসে অফিসের কাজকর্ম। তবে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা আবিষ্কার সংক্রমণ কমে আসতে শুরু করলে ধীরে ধীরে কর্মীদের অফিসে ফেরাতে শুরু করে অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেকে আবার নতুন বছর থেকে কর্মীদের ফেরানোর পরিকল্পনা করেছিল। সে অনুযায়ী গোছানো হচ্ছিল অফিস। কিন্তু সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন।

সদ্য শনাক্ত হওয়া ভাইরাসটির ধরন সম্পর্কে বিজ্ঞানীরাই এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি। অর্থাৎ এর সংক্রমণের ধরন, গতি-প্রকৃতি, কীভাবে এটি কাজ করে তার কিছুই এখনো স্পষ্ট নয়। ফলে যেখানে বিজ্ঞানীরাই রয়েছেন দোলাচলে, সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদেরকে অফিসে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যার মুখে পড়বে; এটাই স্বাভাবিক।

কারণে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আপাতত নতুন কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে না। এখন কেবল চুপচাপ বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ধরনটি কত দ্রুত বিস্তার লাভ করে কীভাবে ছড়ায় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি এটা কতটুকু ক্ষতিকর, সেটিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অবশ্য কর্মীদের ফেরানোর বিষয়টি আরো পিছিয়ে দিয়েছে। যেমন গুগলের মালিক প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন। বিশ্বজুড়ে অ্যালফাবেটের কর্মীদের অফিসে বসে কাজ করার পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য পেছানো হয়েছে।

বিলাসবহুল টয়লেট প্রস্তুতকারক লিক্সিল করপোরেশনের চিফ পিপল অফিসার জিন মনটেসানো বলেন, জাপানের কঠোর কাঠামোবদ্ধ কাজের পরিবেশ থেকে বের হতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মক্ষেত্র কেমন হতে পারে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কাজের জন্য এখন আর আলাদা করে কোনো পরিবেশ দরকার নেই। যেখানেই দরকার পড়বে সেখানে বসেই কাজ শুরু করে দেয়া সম্ভব। ভবিষ্যতের অফিসগুলো এমনই হবে। তাই আমরাও আমাদের কর্মক্ষেত্রটি ভবিষ্যতের উপযোগী করে সাজাতে চাই।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি সপ্তাহ থেকেই অনেক দেশ কঠোর বিধিনিষেধ জারি শুরু করেছে। ফলে কর্মক্ষেত্রগুলোর ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে তা এখনো অনিশ্চিত।

বিষয়ে ফিলিপ মরিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাসেক ওলজাক বলেন, কিছুদিন আগেও সবাই মনে করছিলেন যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি আসলে মোটেও সেরকম নয়। এখনো আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অফিসে ফেরার বিষয়ে এরই মধ্যে পরামর্শ নিতে শুরু করেছে। চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এওন পিএলসির প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. নীল মিলস বলেন, গত সপ্তাহজুড়ে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দিয়েছেন। মূলত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন কী বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সে বিষয়েই পরামর্শ নিতে আসছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে ধরনটি উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে আরো কয়েক সপ্তাহ লাগবে তাদের। তবে প্রাথমিকভাবে যেসব সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে সেগুলো তেমন ক্ষতিকর বলে মনে হয়নি। তবে এটি এত দ্রুত ছড়াতে শুরু করেছে যে মানুষের মধ্যে গত বছরের ভীতি ফিরতে শুরু করেছে।

পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অফিসে ফেরার সময় কিছুটা বাড়িয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট করে কোনো দিন-তারিখের কথা বলা হয়নি। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন