খুলনা লাইভস্টক ভিলেজ প্রকল্পের ফাইল এক যুগেও নড়েনি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

তৃণমূল পর্যায়ে কৃষক-খামারিদের সুরক্ষা এবং নগরীর পরিবেশ দূষণ রক্ষায় প্রায় একযুগ আগে হাতে নেয়া হয় খুলনা কৃষিজ লাইভস্টক ভিলেজ স্থাপন প্রকল্প। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন এবং প্রাথমিকভাবে ব্যাপারে জমি নির্ধারণও হয়। তারপর কেটে গেছে ১১ বছর। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাই।

নগরবাসীর অভিযোগ, খুলনা নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে যেখানে-সেখানে গড়ে উঠছে পোলট্রি ডেইরি খামার, হাড় মিলসহ বিভিন্ন পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। নগরবাসীর দাবি, এসব প্রতিষ্ঠান লোকালয় থেকে সরিয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকায় স্থাপন করা। এমন অবস্থায় ২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনায় কৃষিজ লাইভস্টক ভিলেজ স্থাপনের কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন।

তত্কালীন জেলা প্রশাসক এমএন জিয়াউল আলম ব্যাপারে একটি সভা করেন। সভায় খুলনায় কৃষিজ ভিলেজ স্থাপনের গুরুত্ব বিবেচনা করে তত্কালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যের কৃষিজ লাইভস্টক ভিলেজ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয় এবং ওই বছরের ১২ এপ্রিল কমিটির প্রথম সভায় কৃষিজ ভিলেজের জন্য জমি নির্ধারণে আট সদস্যের ভূমি উপকমিটি গঠন করা হয়।

উপকমিটির সদস্যরা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিভিন্ন মৌজার সরকারি খাসজমি পরিদর্শন এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। এর মধ্যে কৃষিজ ভিলেজ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বদলি হন। কমিটির নতুন দায়িত্ব নেন এডিসি সত্যেন্দ্র কুমার সরকার। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর কৃষিজ ভিলেজ বাস্তবায়ন কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা মাথাভাঙ্গা মৌজার ৬৫ দশমিক ৬৮ একর নিষ্কণ্টক খাসজমি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করে দ্রুত ভিলেজ স্থাপন কাজ শুরুর সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদন জমার পর আর অগ্রগতি হয়নি প্রকল্পটির। এমনকি বাস্তবায়ন কমিটির সভাও হয়নি। ফলে প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

পোলট্রি শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিকভাবেই ২০ হাজার পরিবার কর্মসংস্থানের সুযোগ পেত। জেলার বিভিন্ন স্থানে যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা পোলট্রি খামার, ডেইরি খামার, ছাগল ভেড়ার খামার, ফিশ ফিড মিল, হাড় হাড্ডি মিল, ড্রাই ফিশ প্রসেসিংসহ (শুঁটকি) ১৭ ধরনের ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান একই স্থানে গড়ে উঠত। এতে যেমন নগরীসহ জেলার পরিবেশ দূষণ কমত, তেমনি কৃষক-খামারিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠত।

কৃষিজ ভিলেজ বাস্তবায়ন কমিটির একাধিক সদস্য অভিযোগ করেন, প্রথম অবস্থায় কমিটির যে গতি ছিল অজ্ঞাত কারণে তা স্থবির হয়ে গেছে। উপকমিটি যে সরকারি খাসজমি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিল, তার বেশির ভাগই বেদখল হয়ে গেছে। কেউ কেউ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও করছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেই সহজেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে পারত।

কৃষিজ ভিলেজ লাইভস্টক এলাকা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব খুলনা পোলট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এসএম সোহরাব হোসেন বলেন, এরই মধ্যে পদ্মা সেতু ঘিরে খুলনা নগরীতে গড়ে উঠছে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে কৃষি সেক্টরও উজ্জীবিত হবে।

তিনি বলেন, খুলনা কৃষিজ লাইভস্টক ভিলেজ প্রকল্পের ব্যাপারে আমরা হতাশ। যে কাজটি সহজেই হতে পারত, তা এখন দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। কমিটির আহ্বায়ককে বারবার ব্যাপারে জানিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। কিন্তু এটি বাস্তবায়িত হলে অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যেত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন