প্রতিবাদের নতুন হাতিয়ার ট্যাক্সিক্যাবে ছাদবাগান

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রতিবাদ হিসেবে ট্যাক্সির ওপরে সবজি চাষ করছে থাইল্যান্ডের ক্যাবচালকরা ছবি: এপি

মহামারীর কারণে নানাভাবে বিপদে পড়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। ২০১১ সালের ভয়াবহ বন্যা রাজনৈতিক নানা অস্থিরতার পরও বর্তমান সময়ের মতো খারাপ অবস্থায় আগে কখনো পড়েনি থাইল্যান্ডের মানুষ। নতুন পরিস্থিতিতে ব্যাংককের রাস্তায় ভাড়ায়চালিত ট্যাক্সিগুলোর ছাদে দেখা মিলছে সবজি বাগান। কভিড-১৯ মহামারীকালে অলস বসে থাকা ট্যাক্সিক্যাবগুলোর ছাদে চাষ করা হয়েছে সবজি। এটি কেবল সবজির আপাত সংস্থানের উপায় নয়, চালকদের এক ধরনের প্রতিবাদও।

দুটি ট্যাক্সি পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা গত সপ্তাহে কাজ শুরু করেছেন। একটি বাঁশের ফ্রেমের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যাগ বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ক্ষেত্র। এরপর তাতে মাটি সার দিয়ে বোনা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজির বীজ। এর মধ্যে আছে টমেটো, শসা, বরবটি ইত্যাদি।

মহামারীর কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো থাইল্যান্ডেও ট্যাক্সিক্যাবের চালকরা বেশ ভালো রকমের মন্দার শিকার হন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের উদ্যোগ যেমন সহজেই চোখে পড়ে তেমনি তাদের দুর্দশার কথাও মনে করিয়ে দেয়।

দেশটির রচাপ্রুক বোভর্ন নামে দুটি সমবায় সমিতির অধীন মাত্র ৫০০টি ট্যাক্সিক্যাব এখন ব্যাংককের রাস্তায় চলছে। প্রায় আড়াই হাজারের মতো গাড়ি অলস বসে আছে বলে জানান সমিতির নির্বাহী থাপাকর্ন আসসাওয়ালার্টকুল।

সেখানে এখন কম ভাড়ায় যাত্রী পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকেন চালকরা। ফলে চালকদের আয় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিনের গাড়ির জমার টাকাও দিতে পারেন না। এমনকি পরিস্থিতিতে সমিতি গাড়ির জন্য জমার পরিমাণও অর্ধেক করে দিয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় তা ৩০০ বাথ বা ডলার সেন্ট। যদিও অর্থও সারা দিনে অনেক চালকই আয় করতে পারেন না। ফলে গাড়িগুলো পড়ে থাকে, অলস, নিঃসঙ্গ।

এমন অনেক চালক আছেন, যারা ট্যাক্সি চালানোই বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে গত বছর যখন প্রথম মহামারী শুরু হলো তখন অনেকেই গাড়ি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে পরিবার-পরিজনের কাছে চলে গেছেন। সে সময় অবশ্য শহর ছাড়ার কারণ ছিল নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়। কিন্তু যখন দ্বিতীয় দফায় মহামারীর আঘাত এল, তখন আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি অনেকেই। গাড়ি জমা দিয়ে ফিরে গেছেন পুরনো ঠিকানায়।

থাপাকর্ন আসসাওয়ালার্টকুল বলেন, এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে অনেক চালক শহরের যেকোনো একটি জায়গায় কিংবা গ্যাসস্টেশনে গাড়ি ফেলে রেখে চলে গেছেন। 

এমন পরিস্থিতিতে ট্যাক্সি পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে পড়ে। এসব বাহন কিনতে তাদের যে পরিমাণ ঋণ নিতে হয়েছিল, তা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রচাপ্রুক বোভর্ন সমবায় সমিতির এখনো কোটি লাখ ডলারের দেনা রয়েছে। তা কীভাবে পরিশোধ করা হবে সেটিই এখন ভাবাচ্ছে সমিতির কর্তাদের। এখন পর্যন্ত সরকারও কোনো আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

মুহূর্তে যদি যথাযথ সহায়তা পাওয়া না যায় তাহলে গভীর সংকটে পড়বে বলে জানান সমিতির কর্মকর্তা থাপাকর্ন। তিনি বলেন, কর্মীরা যে ক্যাবের ছাদে বাগান করছেন, সেটি এক ধরনের প্রতিবাদ আসলে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের দুরবস্থার কথা যেমন তুলে ধরছেন তেমনি কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজেদের সবজির বন্দোবস্ত করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন