কাল খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধ থাকার পর কাল থেকে খুলছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কাল খুলবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-কলেজ।তবে এজন্য স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারের দেয়া কিছু নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি কীভাবে ক্লাস হবে বা স্কুল-কলেজের কার্যক্রম কীভাবে চলবে সেটিও ঠিক করে দেয়া হয়েছে।

এরইমধ্যে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করা হয়েছে।চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি অংশ। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ দিতে সব ধরনের ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে। সবকিছু কিছু ঠিক থাকলে লম্বা ছুটি কাটিয়ে কাল থেকে আবার শিক্ষার্থীদের কলকাকলীতে মুখর হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা।

স্কুল-কলেজ খুলতে যে সব নিয়ম মেনে চলতে হবে তার মধ্যে শুরুতেই রয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিগুলো আবশ্যিকভাবে মেনে চলতে হবে।

এছাড়া স্বাভাবিক সময়ের মতো সব শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন স্কুল-কলেজে যেতেও হবে না। শুরুতে কেবল পিএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হবে। এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের অন্য ক্লাসগুলোতে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস চলবে।আপাতত স্কুলগুলোতে দিনের শুরুটা অ্যাসেম্বলি দিয়ে হবে না।আগের চেয়ে কম হবে স্কুল সময়ের পরিধি। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ধীরে ধীরে ক্লাসের দিন ও সময় বাড়ানো হবে।

এছাড়া নভেম্বর মাসে এসএসসি ও ডিসেম্বর মাসে এইচএসসি পরীক্ষার যে সময় ঘোষণা করা হয়েছিল সেটি এখনো বহাল আছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়েই এ দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

চীনের উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর খুব দ্রুত তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমণ রোধে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় এই ছুটি। সবশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি।

তবে সরাসরি প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও চালু ছিল অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এদিকে সংক্রমণের হার না কমায় গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনি পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গড় মূল্যায়নের মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরাও অটো প্রমোশন পায়। সে অনুযায়ীই চলতি বছর অনলাইনে ক্লাস করছে তারা। যদিও দেশের সব শিক্ষার্থীর কাছে এ সুবিধা পৌঁছেনি বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে আসে।

গত মাসের শেষ থেকে দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়।সংক্রমণের নিম্নগতি, সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে নিজেদের মতামত জানায় করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। পরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ১১ সেপ্টেম্বরের পরে আর ছুটি বাড়ছে না।

গত ২৪ আগস্ট ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীর কারণে লম্বা সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। যত বেশি দিন শিশুরা স্কুলের বাইরে থাকবে, ততই তাদের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা কমবে। সেইসঙ্গে বাড়বে সহিংসতা, শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের হার।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন