উপহারের ঘর যারা ভেঙেছে, তাদের তালিকা হাতে রয়েছে —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ছবি: পিআইডি

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর কিছু মানুষ হাতুড়ি শাবল দিয়ে ভেঙে তা গণমাধ্যমে প্রচার করছে। যারা ঘরগুলো ভেঙেছে, তাদের নামের তালিকা রয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রায় এক বছর পর আওয়ামী লীগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী এতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে দুর্ভাগ্য হলো আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা ঘর করে দেব, আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত জঘন্য চরিত্রের, আমি কয়েকটা জায়গায় হঠাৎ দেখলাম যে কি ঘর ভেঙে পড়ছে, কোনো জায়গায় ভাঙা ছবি ইত্যাদি দেখার পর পুরো জরিপ করালাম কোথায় কী হচ্ছে। সেখানে আমরা প্রায় দেড় লাখের মতো ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ৩০০টা ঘর ভেঙেছে বিভিন্ন এলাকায়। কিছু মানুষ নিজে থেকে গিয়ে হাতুড়ি, শাবল দিয়ে সেগুলো ভেঙে ভেঙে তারপর মিডিয়ায় সেসবের ছবি তুলে দিচ্ছে। তাদের নাম-পরিচয় তদন্ত করে বের করা হয়েছে। আমার কাছে পুরো রিপোর্ট এসেছে। গরিবের জন্য ঘর করে দিচ্ছি, তাদের ঘর কেউ এভাবে যে ভাঙতে পারে, ছবিগুলো দেখলে তা বোঝা যায়।

ঘর ভেঙে পড়ার পেছনের কারণ মিডিয়া অনুসন্ধান করেনিঅভিযোগ করে সরকারপ্রধান বলেন, মিডিয়া এগুলো ধারণ করে প্রচার করে, তারা কিন্তু এটা কীভাবে হলো সেটা দেখে না। তদন্তে নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পাওয়া গেছে। যেমন এক জায়গায় ৬০০ ঘর রয়েছে, সেখানে হয়তো তিন-চারটা ঘর প্রবল বৃষ্টিতে মাটি ধসে নষ্ট হয়েছে।

আশ্রয়ণ- প্রকল্পের অধীনে ঘর নির্মাণে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখেছি যে প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। আমাদের ইউএনও-ডিসিসহ সব কর্মচারী ছিল। অনেকে নিজেরা এগিয়ে এসেছে ঘরগুলো তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য। যারা ইট তৈরি করে তারাও এগিয়ে এসেছে, অল্প পয়সায় তারা ইট দিয়েছে। এভাবে সবার সহযোগিতা আন্তরিকতা ছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সাধারণত আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক দুই মাস বা চার মাস পরপর করতাম। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে নিয়মিত সভা করতে পারিনি। এটা করা সমীচীনও হতো না। এখন সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, টিকাকরণও শুরু হয়ে গেছে। মহামারীর কারণে আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদকরা সেভাবে কাজ করতে পারেনি। তার পরও আমি আটটি গ্রুপ করে দিয়েছিলাম, তারা কাজ করেছে। আমরা কিছু সাংগঠনিক তথ্য নেব। তাছাড়া দীর্ঘদিন পর বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনাদের কথা কিছু শুনব।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, নির্বাচনও সামনে। সংগঠনটাও করতে হবে। এবারের নভেল করোনাভাইরাসের সময় দলের লোকেরা সব সহযোগী সংগঠন যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, আর কোনো রাজনৈতিক দলকে এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। মূলত কেউ দাঁড়ায়নি। তাদের কোনো আগ্রহও ছিল না। প্রতিদিন টেলিভিশনে বক্তৃতা বিবৃতি দেয়া। তাদের একটাই কাজ ছিল আমাদের দোষারোপ করা।

করোনা মোকাবেলায় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কখনো একটা সরকারের পক্ষে একা ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব নয়। আমাদের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে, তৃণমূল পর্যন্ত একটা শক্তিশালী সংগঠন থাকায়। এটা আমার বিশ্বাস। জানি কথা হয়তো অন্য কেউ লিখবেও না, বলবেও না। আমি শুধু বলব এককভাবে শুধু সরকারি লোক দিয়ে সবকিছু সম্ভব হয় না।

টিকা কেনার জন্য সরকার সবার আগে উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতে একটা সময় ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণ শুরু হলো, তা তারা আমাদের সরবরাহ করতে পারল না। তারপর আমরা যেখান থেকে, যেভাবে পারি টিকা সংগ্রহ করি। এখন আর সমস্যা হবে না। আমরা নিয়মিত টিকা পাব। মানুষকে টিকা দিতে পারব।

করোনায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা সমালোচনা করেন, তাদেরকে বলব পঁচাত্তরের পর থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দেশের কী অবস্থা ছিল, সেটা যেন তারা একটু উপলব্ধি করে। যে যা ইচ্ছে বলুক, আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়ে চলি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ইশতেহারে যে ঘোষণা করেছিলাম সেটা করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন