জালিয়াতির কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন

গ্যাস ছাড়াই গার্ডেন টাওয়ারের ৯৩ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা

দেবাশীষ দেবু, সিলেট

সিলেটের অন্যতম বৃহৎ আবাসন প্রকল্প গার্ডেন টাওয়ারের গ্যাস সংযোগ সম্প্রতি বিচ্ছিন্ন করেছে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ১১২টি গ্যাস সংযোগের অনুমোদন নিয়ে ১৯৩টি সংযোগ ব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় টাওয়ারটির বৈধ-অবৈধ সব সংযোগই বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে গ্যাসহীন অবস্থায় রয়েছে গার্ডেন টাওয়ারের ৯০টির মতো ফ্ল্যাটের বাসিন্দা।

সিলেটের অন্যতম বৃহৎ আবাসন প্রতিষ্ঠান দ্য ম্যান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। নগরীর মেন্দিবাগ এলাকায় কোম্পানির মালিকানাধীন বৃহৎ আবাসন প্রকল্প গার্ডেন টাওয়ার। টাওয়ারটিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালানো হয়। এতে দেখা যায় অনুমোদনের বাইরে অতিরিক্ত ৮১টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ জুলাই গার্ডেন টাওয়ারের বৈধ-অবৈধ সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জালালাবাদ গ্যাস। এরপর থেকে চরম দুর্ভোগে পড়েছে গার্ডেন টাওয়ারের ফ্ল্যাটগুলোর বাসিন্দারা। এছাড়া গার্ডেন টাওয়ারের পাশেই ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির মালিকানাধীন গার্ডেন ইন হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ফ্ল্যাট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস ব্যবহূত হতো। তবে ১৪ জুলাইয়ের পর থেকে সবগুলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

নগরের মেন্দিবাগ এলাকায় জালালাবাদ গ্যাস ভবনের বিপরীত পাশেই গার্ডেন টাওয়ারের অবস্থান। ২০০৪ সালে নির্মিত হয় টাওয়ার। জালালাবাদ গ্যাসের একটি সূত্র বলছে, নির্মাণের পর থেকেই টাওয়ার কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে অতিরিক্ত ৮১টি গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করে আসছে। ১৭ বছর ধরে চলছে ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির জালিয়াতি। তবে কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, দ্রুতই গ্যাস সংযোগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

গার্ডেন টাওয়ারের ফ্ল্যাটের মালিক বাসিন্দারা বলছেন, তারা প্রতি মাসেই ম্যান অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে গ্যাসের বিল পরিশোধ করে আসছেন। কোনো মাসের বিলই বকেয়া নেই। সব গ্যাস সংযোগই বৈধ বলে তাদের জানানো হয়েছে। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষও ব্যাপারে কখনো কোনো আপত্তি করেনি। অথচ ১৪ জুলাই হঠাৎ করে সবগুলো গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। তাদের অভিযোগ, ম্যান অ্যান্ড কোম্পানি জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের অনিয়ম জালিয়াতির ফল ভোগ করতে হচ্ছে ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের।

গার্ডেন টাওয়ার ফ্ল্যাট মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজমদল আলী বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা প্রতিদিন আমাদের কাছে এসে অভিযোগ দিচ্ছে। তাদের দুর্ভোগের কথা বলছে। কিন্তু ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা গ্যাস সংযোগ আনিনি। এখন বিচ্ছিন্ন করায় আমাদের কোনো দায় নেই। আমরা নিয়মিত বিল পরিশোধ করে আসছি।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টা পুরো ম্যান অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দায়। তারা গ্যাস সংযোগ এনেছেন। আমরা বিলও তাদের কাছে পরিশোধ করি। এখন তারা অবৈধভাবে সংযোগ এনেছেন কিনা বা অন্য কোনো ঝামেলা হচ্ছে এটা তারাই বুঝবেন। দ্রুত আমাদের সংযোগ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমরাও তাদের চাপ দিচ্ছি।

গার্ডেন টাওয়ারের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা প্রসঙ্গে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী খান মো. জাকির হোসাইন বলেন, টাওয়ারের মালিক প্রতিষ্ঠান থেকে বৈধ সংযোগগুলো চালুর ব্যাপারে আবেদন করা হয়েছে। নির্ধারিত জরিমানা আদায় করে তাদের বৈধ ১১২টি সংযোগ আবার চালু করার বিষয়টি জালালবাদ গ্যাসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে।

ব্যাপারে ম্যান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমদ মিসবাহ সঙ্গে দুদিন থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে কোম্পানিটির সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের সব সংযোগই বৈধ। তবে কাগজপত্র নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্যাস সংযোগ আবার চালুর চেষ্টা করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন