২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে মটোরোলা স্মার্টফোনের কার্যক্রম স্থবির হতে শুরু করে। টানা এক দশক পর ২০১৮ সালে রবিশপের মাধ্যমে দেশের বাজারে তিনটি স্মার্টফোন আনে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে দেশে আরো তিনটি স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে মটোরোলা। দেশে স্মার্টফোন বাজারের পাশাপাশি অন্যান্য স্মার্ট প্রযুক্তিপণ্য সরবরাহেও দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে চায় ব্র্যান্ডটি। বর্তমান কার্যক্রম আর নানা পরিকল্পনা নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশে মটোরোলার ন্যাশনাল পার্টনার সেলেক্সট্রা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব আরাফাত। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন শামীম রাহমান
লম্বা একটা সময় দেশে মটোরোলার কার্যক্রম বন্ধ ছিল, কারণ কী?
—২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে মটোরোলার খুব একটা তত্পরতা দেখা যায়নি। এটা শুধু বাংলাদেশে না, বৈশ্বিকভাবেই হয়েছে। সে সময় মটোরোলার সেলফোন কার্যক্রম বৈশ্বিকভাবে গুটিয়ে নেয়া হয়। ২০১১ সালে মটোরোলাকে গুগল কিনে নেয়। আবার গুগলের কাছ থেকে মটোরোলা কিনে নেয় আরেক প্রযুক্তি জায়ান্ট লেনোভো। এখন মটোরোলার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে লেনোভোর মাধ্যমে। দুবার মালিকানা হাতবদল হওয়ায় সারা বিশ্বেই মটোরোলার সেলফোন ব্যবসার কার্যক্রম স্থবির ছিল। বাংলাদেশেও ঠিক একই কারণে এমন হয়েছে।
তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ স্মার্টফোন বাজারে টিকে থাকতে আপনাদের লক্ষ্য কী?
—বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে আমরা কিন্তু টিকে থাকতে পারব না। এ মুহূর্তে আমাদের যেসব সেলফোন পণ্য আছে, প্রত্যেকটিই বেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর আমরা এসেছি। দারাজের ১১/১১ ক্যাম্পেইনে মটোরোলার ডিভাইস দেশের বাজারে পুনরায় বিক্রি শুরু হয়। প্রথমদিকে দিনে সর্বোচ্চ ১৫-২০টি স্মার্টফোন বিক্রি হতো। এখন সেটা দিনে ৭০-৮০ ইউনিটে উন্নীত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, অচিরেই প্রতিদিন ৫০০ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করার মতো অবস্থায় পৌঁছানো।
স্মার্টফোন বাজারে দাম একটা বড় ফ্যাক্টর। বাংলাদেশের বাজারে ছাড়া মটোরোলার ফোনগুলোর দাম কেমন?
—দেশে মটোরোলা জি৮ পাওয়ার লাইট স্মার্টফোন ১৪ হাজার ৯৯৯ টাকায় বিক্রি শুরু করা হয়, যা এখন ১৩ হাজার ৯৯৯ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ স্মার্টফোন বেশ ভালো অবস্থায় আছে। জি৯ প্লে বিক্রি করা হচ্ছে ১৬ হাজার ৯৯৯ টাকায়। জি৯ প্লাস বিক্রি করা হচ্ছে ২৭ হাজার ৯৯৯ টাকায়। এসব স্মার্টফোনে যেসব ফিচার রয়েছে, তা বাংলাদেশের বাজারে থাকা বিদ্যমান ফোনগুলোর সঙ্গে দাম বিবেচনায় বেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ভোক্তাকে সাশ্রয়ী দামে মানসম্পন্ন পণ্য দেয়া।
দেশে শুধু স্মার্টফোন ঘিরেই মটোরোলার কার্যক্রম পরিচালিত হবে?
—
না, আমরা প্রডাক্ট পোর্টফোলিও নিয়ে কাজ করছি। মটোরোলার অনেক লাইফ স্টাইল পণ্য দেশে বাজারজাত শুরু হয়েছে। গত জুলাইয়ে হেডফোন, ব্লুটুথ হেডফোন, স্পিকারসহ বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেট বাংলাদেশে উন্মোচন করা হয়েছে। আগামীতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াশিং মেশিন, এসির মতো কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স পণ্য বাংলাদেশে আনার। পাশাপাশি বাংলাদেশে মটোরোলার ফিচারফোন আনার পরিকল্পনাও রয়েছে। আমরা ডিস্ট্রিবিউশন বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছি। সার্ভিস সেন্টার, আফটার সেলস সার্ভিস সেন্টার নিয়েও কাজ করছি।
মোবাইল প্রযুক্তি উন্নয়নে মটোরোলার নিজস্ব কোনো কার্যক্রম আছে কি?
—হ্যাঁ..। মোবাইল প্রযুক্তির উন্নয়নে মটোরোলা কাজ করে যাচ্ছে। ভারতে মটোরোলার ফাইভজি ফোন বাজারজাত করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে স্মার্টফোনের বাজারে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে মটোরোলার উদ্ভাবনী প্রযুক্তিপণ্য ‘মটো রেজর’
নিয়ে। মটোরোলার জন্য এ স্মার্টফোন সবচেয়ে বড় সাফল্য। ভাঁজ করা স্মার্টফোনটির জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে।
অনেক ব্র্যান্ড বাংলাদেশে স্মার্টফোন তৈরি করছে। মটোরোলার এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
—বাংলাদেশে ব্যবসা করতে কারখানা স্থাপন করতেই হবে। কারখানা ছাড়া আমরা যত চেষ্টাই করি, ব্যবসায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারব না। বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের জন্য মটোরোলা প্রস্তুত হয়ে আছে। কিন্তু চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। আমরা শিগগিরই বাংলাদেশে ফোন উৎপাদনে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
ফিচার ফোন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা?
—বাংলাদেশের ফিচার ফোন বাজার নকিয়া ও স্যামসাংয়ের দখলে। উভয় প্রতিষ্ঠান মিলে বছরে অন্তত চার লাখ ফিচার ফোন বিক্রি করছে। বাংলাদেশের বাজারে ফিচার ফোনের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মটোরোলা ফিচার ফোন আনার কথা ভাবছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।