বাণিজ্যনীতি নয়, কৌশল পাল্টাবেন বাইডেন

বণিক বার্তা ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া জো বাইডেন যখন আগামী মাসে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেবেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক নীতি বদলে দেবেন। কিন্তু যখন বিষয়টি হবে বাণিজ্যনীতির প্রসঙ্গে, সেক্ষেত্রে খুব সামান্যই পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বাইডেন। অন্তত প্রথম দিকে তো বটেই। খবর এএফপি।

গত বুধবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি সাক্ষাত্কারে ট্রাম্পকে নির্বাচনে ধরাশায়ী করা বাইডেন স্পষ্টভাবে বলেছেন, তার প্রথম কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের ডুবন্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা, বাণিজ্যনীতির আমূল পরিবর্তন নয়।

তিনি বলেন, আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি, আমেরিকায় প্রথম বিনিয়োগ করার জন্য আমরা কঠিন লড়াই করতে যাচ্ছি। নিজেদের ঘরে এবং আমাদের শ্রমিকদের জন্য প্রধান বিনিয়োগগুলো সম্পন্ন করার আগে আমরা কারো সঙ্গে নতুন করে চুক্তিতে প্রবেশ করতে যাচ্ছি না।

এই বিবৃতিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু শত্রুদের জন্য একই রকম প্রভাব ফেলেছে। এর আগে ট্রাম্প অনুপযুক্ত ভর্তুকি এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তি চুরির অভিযোগ এনে বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

বছরের শুরুতে প্রথম পর্যায়ের চুক্তি উত্তেজনা প্রশমিত করেছিল এবং বাইডেনের মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তিনি হয়তো প্রাথমিকভাবে চুক্তি আঁকড়ে ধরবেন এবং  বেইজিংয়ের ওপর চাপানো শুল্কের ইতি টানবেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্তব্য দেখাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনের বাণিজ্য সম্পর্কগুলো উল্টে দেয়ার ঝুঁকি বুঝতে পেরেছেন, তাও এটা এমন সময় যখন কভিড-১৯ মহামারী দ্বারা অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ঘরোয়া মিত্রদের ক্রোধ নিয়ে সতর্ক তিনি, যা তাকে সাহায্য করছে নির্বাচনে জিতে আসতে।

কর্নেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির প্রফেসর এসওয়ার প্রাসাদ বলেন, চীনের জন্য এটা আশ্চর্যের কিছু নয়। যদি বাইডেন চীন থেকে ছাড় দাবি না করে শুল্ক সরিয়ে দেন, তবে তিনি শ্রমিক ইউনিয়ন রিপাবলিকান পার্টির চীনবিরোধীদের কাছ থেকে ব্যাপক চাপের মুখে পড়বেন।

ট্রাম্পের উদ্ভট কূটনীতি চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ওয়াশিংটনকে একাকী করে দিয়েছিল। এদিকে বাইডেন এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে বেষ্টনীগুলো সংস্কারে মনোযোগ দেবেন।

চীন সম্পর্কিত সেরা কৌশলটি কী হতে পারে তা জানাতে গিয়ে বাইডেন বলেন, প্রেসিডেন্সির প্রথম সপ্তাহে আমার অগ্রাধিকার থাকবে নিজেদের মিত্রদের নিয়ে একই জায়গায় দাঁড়ানো।

ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মিত্রদের সঙ্গে উন্নততর সম্পর্কই পারে যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে, যা তাদের অনুমতি দেবে চীনকে আরো ছাড়ের ব্যাপারে চাপ দেয়ার জন্য। 

প্রাসাদ বলেন, বাইডেনের দলকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য অর্থনৈতিক সমঝোতার জন্য একটা বেসলাইন ধরিয়ে দেয়া হবে, যা সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘাতের দিকে চালিত করবে।

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নেতৃত্ব ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনায় কৌশল ট্যাকটিসের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসবে। কিন্তু সার্বিকভাবে চীনের প্রতি বৈরী মনোভাবে বেশির ভাগ অপরিবর্তিত থেকে যাবে।

বাইডেনের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি, এখানেও ট্রাম্পের অধীনে ধারাবাহিকভাবে শুল্ক চাপানো হয়েছিল। এছাড়া মহাকাশ শিল্প থেকে ডিজিটাল কর পর্যন্ত অসংখ্য বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবদ্ধ আছে তারা।

তবে আঞ্চলিক ব্লকগুলো এখন সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, ব্রাসেলস ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার কাজ করছে। যার মধ্য দিয়ে মহামারী থেকে বনজঙ্গল রক্ষা পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই কাজ করতে চায় তারা।

পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কাউন্সিলর এডওয়ার্ড আলডেন বলেন, আমার মনে হয় বাইডেন প্রশাসন -জাতীয় উদ্যোগের পক্ষে সহায়ক হবে।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন