শ্রীলংকায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্তের মুখে ব্রিটিশ ভাড়াটে সেনারা

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত শতাব্দীর আশির দশকে শ্রীলংকান গৃহযুদ্ধে সম্পৃক্ততা ছিল ব্রিটিশ মার্সেনারিজ বা ভাড়াটে সেনাগোষ্ঠী কিনি মিনি সার্ভিসেসের (কেএমএস) এবার তাদের বিরুদ্ধে দ্বীপদেশটিতে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগ উঠেছে, যার তদন্ত করছে ব্রিটেনের মেট্রোপলিটন পুলিশ।

কেএমএস ব্রিটেনের প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি, যারা ভাড়ায় সৈন্য পাঠাত। এই কেএমএস ১৯৮০-এর দশকে স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) নামে শ্রীলংকান পুলিশের একটি এলিট ইউনিটকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

এসটিএফের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনা বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া তামিল বেসামরিক মানুষদের হত্যা করা।

মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক প্রথম কোনো ব্রিটিশ মার্সেনারিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, ব্রিটিশ কোনো মার্সেনারিজ যুদ্ধাপরাধ করেছে, এই মর্মে গত মার্চে তারা তদন্তের সুপারিশ পান। এর পরই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়।

তদন্তে তথ্যপ্রমাণ আসবে ব্রিটিশ সরকারের অশ্রেণীবদ্ধ নথি আর ফ্রিডম অব ইনফরমেশন হিসেবে জমা দেয়া ব্রিটিশ সাংবাদিক ফিল মিলারের বই থেকে। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয় তার বই কিনি মিনি: দ্য ব্রিটিশ মার্সেনারিজ হু গট অ্যাওয়ে উইথ ওয়ার ক্রাইমস

ফিল মিলার জানান, তদন্ত ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করছে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দুই লাখের মতো তামিল সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা শ্রীলংকায় গৃহযুদ্ধের সময় লন্ডনে পালিয়ে যায়।

সাংবাদিক মিলার বলেন, ১৯৮০-এর দশকে প্রচুরসংখ্যক তামিল জনগণ শরণার্থী হয়, যখন সেখানে (শ্রীলংকা) ছিল কেএমএস। মানুষ এখনো মনে করতে পারে যে তখন হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করা হতো এবং ওই হেলিকপ্টারগুলোর চালক ব্রিটিশ মার্সেনারিজের লোকজন জেনে তারা আরো বিস্মিত হয়েছিল।

শ্রীলংকান গৃহযুদ্ধ

দীর্ঘ ২৬ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ২০০৯ সালে তামিল টাইগারদের পুরোপুরি পরাস্ত করতে সমর্থ হয় শ্রীলংকা সেনাবাহিনী। যুদ্ধটা জাতিগতভাবে শ্রীলংকাকে ভেঙে দেয়। তামিল বিদ্রোহীরা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি তুললেও তা মানেনি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের প্রশাসন। তারা যুদ্ধে তামিলদের পরাজিত করে।

যুদ্ধে অন্তত এক লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং ২০ হাজারের মতো নিখোঁজ হয়, যাদের বেশির ভাগই তামিল। যুদ্ধশেষে নৃশংসতার জন্য দুই পক্ষকেই অভিযুক্ত করে জাতিসংঘ। অন্যদিকে, বছরের শুরুর দিকে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন, নিখোঁজ মানুষগুলো সবাই মারা গেছেন।

কেএমএস প্রতিষ্ঠা করেন এসএএসের সাবেক কর্মকর্তা ডেভিড ওয়াকার। কেএমএসের অস্তিত্ব এখন আর নেই, যদিও থেকে সৃষ্ট কেনসিংটন ভিত্তিক সালাদিন সিকিউরিটিজের অন্যতম পরিচালক তিনি।

৭৮ বছর বয়সী ডেভিড ওয়াকার দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেছেন, কেএমএসের কেউই শ্রীলংকায় যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল না। এক বিবৃতিতে তার প্রতিনিধি বলেছেন, ডেভিড ওয়াকার কেএমএসের বিরুদ্ধে ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলংকায় যুদ্ধাপরাধের সহযোগী থাকার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে প্রত্যাখ্যান করা হলো। সালাদিন সিকিউরিটি কেএমএস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি কোম্পানি এবং শ্রীলংকার সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কেএমএসের শেয়ারহোল্ডার কিংবা পরিচালক কোনোটিই ছিলেন না ওয়াকার। ইউনিটটি (যুদ্ধাপরাধ সংশ্লিষ্ট) এখনো সালাদিন কিংবা ওয়াকারকে সহযোগিতা করার বিষয়ে কিছু জানায়নি, কিন্তু তারা বলছে তারা খুশিমনেই ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন। বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন