সম্রাটের বিরুদ্ধে ২ মামলায় চার্জশিট আমলে গ্রহণ, জামিন নাকচ

আদালত প্রতিবেদক

কারাগারে থাকা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলার দুটি চার্জশিট বিচারের জন্য আমলে গ্রহণ করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ চার্জশিট দুটি আমলে নিয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর চার্জগঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন। 

মামলা দুটিতে এদিন সম্রাটের জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে মিডিয়ার চাপে অসুস্থ সম্রাটকে হাসপাতাল ছেড়ে কারাগারে থাকতে হচ্ছে বলে জামিন আবেদনের শুনানিকালে অভিযোগ করেছেন আইনজীবীরা। 

এদিকে প্রায় ১ বছর ১ মাস ধরে কারাগারে থাকা এই নেতার মুক্তি চেয়ে তার কর্মী-সমর্থকরা আদালতে ব্যাপক শোডাউন করেছে। আদালতের সামনে আজ হাজারো কর্মী-সমর্থকরা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন।

আজ সকাল ১০টার দিকে সম্রাটকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। সঙ্গে আনা হয় একই সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকে। তিনি সম্রাটের সঙ্গে মাদক মামলায় সহ-আসামি। সম্রাটকে আদালতে আনার পর তাকে হাজতখানায় রাখা হয়। সেখান থেকে বেলা সোয়া ১১টায় তাকে মামলার শুনানি শুরুর জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলার এজলাসের লোহার খাঁচার কাঠগড়ায় ওঠানো হয়। হাজতখানা থেকে আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানোর জন্য সম্রাটকে বের করা হলে কর্মী সমর্থকরা ‘মুক্তি চাই, মুক্তি চাই’ স্লোগান শুরু করেন। 

আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানোর পরও বাইরে স্লোগান চলায় বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ আইনজীবীদের উপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি কর্মীসমর্থকদের স্লোগান বন্ধ করার জন্য সম্রাটের আইনজীবীদের বলেন। পরে আইনজীবীরা বুঝিয়ে তাদের স্লোগান বন্ধ করান। ১১টা ৪০ মিনিটে সম্রাটের দুই মামলায় শুনানি শুরু হয়। শুনানি শুরুর আগে বিচারক বিচার কক্ষে উপস্থিত সকল সাধারণ আইনজীবীদের বের করে দেন। 

এরপর সম্রাটের মামলায় শুনানির জন্য দাঁড়ানো ১২ জন আইনজীবীদের মধ্যে যাদের নাম ওকালতনামায় আছে তাদের ছাড়া বাকীদের বের হয়ে যেতে বলেন। এনিয়ে বিচারকের সাথে সম্রাটের আইনজীবীদের বাকবিতন্ডা হয়। তারা বলেন, অনেক সিনিয়র আইনজীবীদের স্বাক্ষর ওকালতনামায় থাকে না। তারা এসে শুনানি করেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর শুনানি শুরু হয়। 

এদিন সম্রাটের পক্ষে অ্যাডভোকেট গাজী জিল্লুর রহমান, আফরোজা শাহানাজ পারভীন (হীরা), মাহবুবুল আলম দুলাল। শুনানিতে তারা বলেন, সম্রাট একজন জনপ্রিয় নেতা। তাকে ভিকটিমাইজড করার জন্য যা যা করার দরকার তাই করা হয়েছে। তার কাছে কিছুই পায়নি। নেতাকর্মীরা তাকে ভালোবাসে। এজন্যই শত শত নেতাকর্মী আজ (মঙ্গলবার) আদালতে ছুটে এসেছে তাকে দেখতে, তার মুক্তির দাবি নিয়ে। তারা বলেন, ১৯৯৯ সালে সম্রাটের বাল্ক রিপ্লেস করা হয়। নিয়মিত চেকআপ করার জন্য বিদেশে যেতে হয়। দেশে এ চিকিৎসার প্রোপার ট্রিটমেন্ট সম্ভব নয়। তাকে প্রোপার ট্রিটমেন্ট বাঁচিয়ে রাখার জন্যই জামিন হওয়া প্রয়োজন।

আইনজীবীরা বলেন, সম্রাটের অস্ত্র ও মাদক মামলার ভিত্তি দুর্বল। যার কারণে হরিণের চামড়া উদ্দেশ্যের ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ৬ মাসের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। সম্রাট অসুস্থ। আমরা তার জামিন চাই। এক বছরের অধিক সময় জেলে। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মিডিয়ার প্রেসারের কারণে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে হাসপাতাল থেকে জেলে থাকতে হচ্ছে। তাকে বলির পাঠা বানানো হয়ছে, তাকে জবাই করা হয়েছে। তাকে বাঁচতে দিন, বেঁচে থাকলে বিচার হবে। অপর আসামি আরমানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম সুমন শুনানি করেন। 

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল জামিনের বিরোধিতা করেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আদেশ পরে দিবেন বলে জানান। আর উভয় মামলায় চার্জশিট আমলে গ্রহণ করে ৩০ নভেম্বর চার্জগঠনের শুনানির দিন ঠিক করেন। এরপর দুপুরে আদালত সম্রাটের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন।

এর আগে গত ৬ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১ এর সাব-ইন্সপেক্টর শেখর চন্দ্র মল্লিক অস্ত্র মামলায় সম্রাটের বিরুদ্ধে এবং গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১ এর এসআই (নি.) আব্দুল হালিম সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। 

চার্জশিটে সম্রাট ও আরমানের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ব্যান্ডের ১৯ বোতলে ১৯ লিটার বিদেশী মদ এবং এগারশ ৬০ পিস ইয়াবার রাসায়নিক পরীক্ষায় বিভিন্ন ব্যান্ডের ১৯ বোতল বিদেশী মদ ৩৭ থেকে ৪৩ শতাংশ অ্যালকোহল পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ইয়াবায় মাদক অ্যামফিটামিনের উপস্থিতি রয়েছে বলে বলা হয়েছে। যা ২০১৮ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) এর সারণি ২৪(খ)/১০(ক)/৪১ ধারার অপধার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অস্ত্র মামলার চার্জশিটে সম্রাটের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৭.৬৫ বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন আনুমানিক সাড়ে চার ইঞ্চি লম্বা, ৫ রাউন্ড তাজা গুলির লাইসেন্স বিহীন অস্ত্র নিজ হেফাজতে রাখা অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে গত ৬ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে আটক করা হয়। আটকের সময় আরমান মাদকাসক্ত অবস্থায় থাকায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সম্রাটকে কাকরাইলে তার রাজনৈতিক অফিসে অভিযান চালিয়ে উল্লেখিত অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন