কভিড-১৯ সংক্রান্ত ৯টি মিথ

তানিয়া লিউস

কভিড-১৯-এর পাশাপাশি ভিন্ন একটি মহামারীও গোটা দুনিয়ায় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটি হচ্ছে ভুল তথ্য। যাকে বলা হচ্ছে ইনফোডেমিক এটিও কভিড-১৯-এর মতো সমান ক্ষতিকর। যা মানুষকে রোগ সম্পর্কিত ধারণা জনস্বাস্থ্য পরামর্শকে ভুল পথে চালিত করে। যেখানে অবৈজ্ঞানিক অপ্রমাণিত চিকিৎসা ব্যবস্থাও রয়েছে।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের চারজন আমেরিকান বলছে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যগুলো সবচেয়ে বড় সমস্যা। এমনকি শক্ত প্রমাণ থাকার পরও বিশ্বাসগুলো কদাচিৎই বদলাচ্ছে। এখানে মহামারী সম্পর্কে তেমন কিছু ভুল তথ্য তুলে ধরা হলো।

মিথ : নভেল করোনাভাইরাস চীনের একটি ল্যাবে তৈরি করা হয়েছেএমন দাবির কারণ ছিল ভাইরাসটির আবির্ভাব প্রথমে চীনের উহানে হয়েছে এবং সেখানকার মানুষকে সংক্রমিত করে। মার্কিন প্রেসিডেন্টও কোনো প্রমাণ ছাড়া দাবি করেন এটি চীনের ল্যাবরেটরি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু ষড়যন্ত্রতত্ত্বও ছড়িয়ে পড়ে যে এটিকে বায়োওয়েপন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যদিও ইউএস ইন্টেলিজেন্স স্পষ্টভাবে এমন সম্ভাবনা বাতিল করেছে।

মিথ : অভিজাত ধনীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতা মুনাফার আশায়—‘প্যানডেমিক নামের একটি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে এমন দাবি করেছিলেন ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিকদের একজন জুডি মমিকোভিটস। তিনি দাবি করেছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসি মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে রোগ থেকে সুবিধা লাভ করছে। সেই ভিডিও চিত্রটি অ্যান্টিভ্যাক্সারও ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক গ্রুপ কিউএনন ব্যাপকভাবে প্রচার করে।

মিথ : কভিড-১৯ ফ্লুর চেয়ে খারাপ না। মহামারীর শুরুর দিকে ট্রাম্প বারবার দাবি করেছিলেন যে এটি মৌসুমি ফ্লুর চেয়ে খুব একটা খারাপ অবস্থা তৈরি করবে না। কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা না কমলেও এপিডেমিওলজিস্টদের সন্দেহ যে এটা ফ্লুর চেয়ে অনেক বেশি ভয়ানক।

মিথ : মাস্ক পরার প্রয়োজন নেইযদিও প্রথম দিকে মাস্ক নিয়ে সিডিসি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি বিভ্রান্তিকর ছিল। কিন্তু এখন অনেকগুলো গবেষণার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দৃঢ়ভাবে মত প্রকাশ করেছেন যে মাস্ক পরার মাধ্যমে মহামারীকে সীমিত রাখা যায়। উৎসকে থামানোর জন্য মাস্ক বেশ কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যেমন আক্রান্ত রোগীকে মাস্ক পরানোর মাধ্যমে রোগের বিস্তৃতি কমানো। এমনকি এখন আমরা জানি যে কাপড়ের তৈরি মাস্কও ভাইরাস সংক্রমণ কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

মিথ : হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন একটি কার্যকর চিকিৎসাএমন একটি তথ্যকে আঁকড়ে ধরে ট্রাম্পসহ অনেকেই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পক্ষে কথা বলেছিলেন, এমনকি এটি কভিড-১৯ রোগীকে তেমন কোনো সুবিধা দেয় না, এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও। একটি টুইটে ট্রাম্প এই চিকিৎসাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম সেরা গেম চেঞ্জার বলেও মত দেন। এফডিএও শুরুতে জরুরি অবস্থায় এটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়, যদিও পরে এটা ব্যবহারে সতর্কবার্তা দেয়। কারণ এটি হূদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

মিথ : ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার নামক প্রতিবাদ কর্মসূচি সংক্রমণ বাড়িয়েছেহাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে মে মাসের শেষ দিকে এবং জুনে পুলিশের হাতে খুন হওয়া জর্জ ফ্লয়েড এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর চলমান সহিংসতার প্রতিবাদ জানায়। কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলে বলে, জমায়েত করোনার সংক্রমণ বাড়াবে। কেউ কেউ এটিকে ব্যায়ামাগারে গির্জায় যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করে। যদিও প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়নি। অন্যান্য বিশ্লেষণেও দেখা যায়, প্রতিবাদ থেকে সংক্রমণ বা মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির কোনো প্রমাণ মেলেনি।

মিথ : টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোয় কেসের সংখ্যা বেড়েছেসাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পর এমন মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে অনেক মানুষকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদিও অনেকগুলো গবেষণা ট্রাম্পের বক্তব্যের উল্টোটা হওয়ার কথা বলেছিল।

মিথ : জনগণকে সংক্রমিত হতে দিয়ে আমরা হার্ড ইমিউনিটি লাভ করতে পারবমহামারীর শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র সুইডেনের মতো দেশ এমন অনুমানভিত্তিক খবরের ওপর আস্থা রেখেছিল। এর অর্থ ছিল, যথেষ্ট পরিমাণ মানুষকে সংক্রমিত হলে তারা ইমিউন হয়ে ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারবে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের কৌশলের ভেতর বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে।

মিথ : কোনো ভ্যাকসিন নিরাপদ না, বরং কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণবিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের। তবে এমন খবরও সামনে এসেছে যে অনেক মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী না। এখন সম্ভাব্য কার্যকর ভ্যাকসিনের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব নিয়ে সরব হয়েছে ভ্যাকসিনবিরোধী গ্রুপগুলো। যদিও এমন ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত মেলেনি।

দ্য সায়েন্টিস্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন