হুমকিতে ব্যক্তির গোপনীয়তা

অ্যান্ডি মুখার্জী

আমরা যেভাবে কাজ করি, সামাজিক যোগাযোগে যুক্ত থাকি এবং ভ্রমণে যাই তার মাঝে কিছু পরিবর্তন এনে কভিড-১৯-পূর্ব জীবনের অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে পারি। যদিও করোনা-পরবর্তী জীবনের যে চিত্র তা খুবই আলাদা হতে যাচ্ছে। উপাত্তের ওপর ব্যক্তির যে দখল তা সারা জীবনের জন্য হারিয়ে যেতে পারে। আমাদের মোবাইল বরং আমাদের নিরাপদ রাখতে পারে, নিজেদের ওপর গোয়েন্দাগিরি চালানোর মাধ্যমে।

এটা কেবল নাগরিক রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হবে না, বরং ব্যবসায়ী ভোক্তার মধ্যেও হবে।

মানুষের অনেক গোপনীয়তা শেষ হতে চলেছে। দক্ষিণ কোরিয়া তাইওয়ান আক্রান্ত লোককে ট্র্যাক করার মধ্য দিয়ে কভিড-১৯-এর সংক্রমণের মাত্রাকে সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে। যেজন্য তারা প্রশংসিতও হয়েছে। গত মার্চে আমার সহকর্মী অঞ্জনা ত্রিবেদী বলছিলেন, কোনো সরকার সিওলের মতো ভাইরাসের বিস্তার রোধের জন্য বিক্ষিপ্ত ডাটাবেজ ব্যবহার করছে না। শ্রমিকদের ডরমিটরিতে বাজেভাবে আঘাত হানার আগ পর্যন্ত ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণ করে প্রশংসিত হয়েছিল সিঙ্গাপুর। যেখানে গোটা দেশে ব্লুটুথ কন্টাক্ট-ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করা হয়েছিল। দ্বীপ দেশটির জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ . মিলিয়ন লোক এটি ব্যবহার করে।

পূর্ব এশিয়ায় ধরনের সফটওয়্যার অনেকেই গ্রহণ করেছে। নিয়ে প্রফেসর ইয়াসেং হোয়াং বলেন, সম্মিলিত চেতনা নাগরিক মনকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে সরকারের সংক্রমণ প্রতিরোধের নীতিকে গ্রহণ করতে এবং তাতে সম্মতি জানাতে।

তবে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা শুরুটা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে, শেষটা সম্ভবত আরো বেশি সর্বজনীন হতে পারে। যা কিনা ক্ষমতা লাভের কথা বলছে। নিরাপদে অর্থনৈতিক খাতগুলো খুলে দিতে সরকারের প্রয়োজন হবে ফ্যাক্টরি, অফিস, ক্যাফে ট্রেনে মানুষের মাঝে বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করা। এটি মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক থেকে পাওয়া তথ্যগুলোর চেয়ে আরো বেশি সূক্ষ্ম তথ্য দিয়ে করা যেতে পারে।

অতঃপর রাষ্ট্র চাইবে ফোনে প্রবেশ করতে, সেটা জানিয়ে কিংবা না জানিয়েও হতে পারে। অতীতে ফেরা তাই কঠিন হবে, অসম্ভব না হলেও।

টেক ইন্ডিয়ার অ্যাপ আরোগ্য সেতু অথবা ব্রিজ অব হেলথ কভিড-১৯-এর কন্টাক্ট ট্র্যাকিং অ্যাপ। যারা গোপনীয়তার ব্যাপারে সংবেদনশীল এটি তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে, কারণ অ্যাপগুলোর ডাটা সুরক্ষা কাঠামোতে দুর্বলতা রয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, বাহ্যিক সার্ভারে সংগ্রহ করা ডাটাগুলোকে যেন মুছে ফেলার মতো করে তৈরি করা হয়। নয়াদিল্লিভিত্তিক ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের দাবি, এখনো এটুকু আশা আছে যে প্রাদুর্ভাবের পর অ্যাপগুলো চলে যাবে। যদিও তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সিঙ্গাপুরের অ্যাপটি বেনামে স্মার্টফোন থেকে শরীরের নৈকট্য রেকর্ড করে। যদি কোনো ব্যবহারকারী অসুস্থ বোধ করে তবে তার কন্টাক্ট ট্র্যাক করা হয় এবং সতর্ক করা হয়। ভারতের অ্যাপটি আবার একদম রকম না। ৪৩ দিনের লকডাউনের পর এটি প্রথমে সরকারি খাতে এবং পরে বেসরকারি খাতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোম্পানির বসদের নিশ্চিত করতে হবে তাদের কর্মীরা অ্যাপ ডাউনলোড করেছে। যদিও এসব উপাত্তের অপব্যবহারের জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। সম্প্রতি এক ফরাসি গবেষক দাবি করেছেন, ভারতের ৯০ মিলিয়ন মানুষের গোপনীয়তা হুমকির মধ্যে আছে। যদিও ভারত তা অস্বীকার করেছে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই এলিয়ট অ্যান্ডারসন নামে তথাকথিত এক হ্যাকার দাবি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অফিসে পাঁচজন লোক অসুস্থ বোধ করছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণ বলছে, চীনে আলিপে হেলথ কোড সফটওয়্যার, যা কিনা ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা দেখানোর পাশাপাশি কিছু তথ্য পুলিশের সঙ্গেও ভাগাভাগি করে। এদিকে আলিবাবা কিংবা তার প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ টেনসেন্ট হোল্ডিংয়ের মতো কোনো কিছু ভারতে নেই। তবে আগ্রহী অনেকেই আছে। এখন কভিড-১৯ হয়তো সে সুযোগ করেও দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর ব্যক্তিস্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছিল, যা হয়েছিল মূলত নিরাপত্তার নামে। এখন কভিড-১৯ জনস্বাস্থ্যের নামে ব্যক্তির গোপনীয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে যাচ্ছে।

সাউথ ক্যারোলাইনার ক্লেমসন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের প্রফেসর রিচার্ড ব্রুকস বলেন, যদি সামাজিক যোগাযোগ ট্র্যাক করে সংক্রমণ রোধ করা যায়, তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এটিকে ভিন্নমত ছড়িয়ে দেয়ার জন্যও ব্যবহার করা হবে।

বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হয়তো এখনো এটাকে প্রতিরোধের সুযোগ আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, যেমন ব্যক্তির স্বশাসন, এরই মধ্যে ভাইরাসের দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

 

এনডিটিভি থেকে চুম্বকাংশ অনুবাদ করা হয়েছে

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন