বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি

বাস স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত, শিগগির দরপত্র

শামীম রাহমান

ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাসের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ করছে সরকার। এটি হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি। সড়ক জনপথ অধিদপ্তর, সেতু বিভাগ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মিলে বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্বতন্ত্র সরকারি কোম্পানির মাধ্যমে বিআরটি রুটটিতে ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস পরিচালনা করা হবে। যেসব বাস আনা হবে, সেগুলোর স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই বাসগুলো কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি। এর দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক কিলোমিটার। বিআরটি লেনে যেন নির্বিঘ্নে যানবাহন চলতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন ইন্টারসেকশন বাজার এলাকায় ছয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। তুরাগ নদের ওপর বিদ্যমান টঙ্গী সেতুটি উন্নীত করা হচ্ছে ১০ লেনে। এর বাইরে গাজীপুরে একটি বাস ডিপো, উচ্চ ক্ষমতার ড্রেন, ছয়টি বাজার উন্নয়ন, ২০ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। বিআরটি লেনের নির্মাণ শেষে এখানে ৫০টি বাস পরিচালিত হবে। বাসগুলোর জন্য ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠন করে দিয়েছে সরকার।

সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের একটি সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, বিআরটি লেনে ৫০টি আর্টিকুলেড বাস পরিচালনা করা হবে। বাসগুলোর ধরন কী হবে, তা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। সবকটি বাসই হবে এসি। প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের যাত্রীর ব্যবহারের সুবিধা করেই বাসগুলোর স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই বাসগুলো কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।

বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চন্দন কুমার বসাক বণিক বার্তাকে বলেন, বিআরটি লেনে যেসব বাস চলবে, সেগুলোর স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এটা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। স্পেসিফিকেশনগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই বাসগুলো কেনার জন্য আমরা দরপত্র আহ্বান করব।

বাস কেনার উদ্যোগ এগিয়ে নেয়া হলেও এখনো অনেকটাই বাকি বাস লেনের নির্মাণকাজ। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিআরটি প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ভৌত কাজ এগিয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি আরো কম, প্রায় ২৬ শতাংশ।

সরকারের ২০ বছর মেয়াদি সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) রাজধানীতে দুটি বিআরটির সুপারিশ করে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর ভিত্তিতে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে বিআরটি-৩। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায় ২০১২ সালে। নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরে বিআরটির ডিপো নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

প্রায় ২০ কিলোমিটার বিআরটি লেনের মধ্যে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার হবে রাস্তার সমান্তরালে। অংশটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চীনের গেঝুবা গ্রুপকে নির্মাণকাজে ঠিকাদার নিয়োগ করে সওজ। অংশটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৮৫৫ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ১০ লেনের টঙ্গী সেতু উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গীর চেরাগ আলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার উড়ালসড়ক নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে সেতু বিভাগ। অংশটি নির্মাণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জিয়াংসু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপকে নিয়োগ দিয়েছে সেতু বিভাগ। কাজের চুক্তিমূল্য ৯৩৫ কোটি টাকা। এর বাইরে বাস ডিপো, ড্রেন, ফুটপাত বাজার এলাকার উন্নয়নকাজ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ। এমন অবস্থায় চলতি বছরের জুনের মধ্যে কোনোভাবেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। প্রকল্পের কাজ শেষ করে কবে নাগাদ বাস পরিচালনা শুরু হতে পারে, এমন প্রশ্নে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক চন্দন কুমার বসাক বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা আশা করছি, ২০২১ সালের মধ্যেই বিআরটি চালু করতে পারব। তাই ২০২১ সাল পর্যন্ত আমরা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধনের কাজ করে যাচ্ছি।

কাজে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটির মূল কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রকল্পটি দেশের অন্যতম ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের ওপর হচ্ছে, যেখানে সবসময় তীব্র যানজট থাকে। যানবাহনের চাপ যানজটের কারণে কাজ বাস্তবায়নের গতি কিছুটা কম। এখানে আরেকটি সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। কারণে বর্ষাকালে আমরা বিআরটির নির্মাণকাজ খুব বেশি এগিয়ে নিতে পারি না। তবে আমরা আশা করছি, ২০২১ সালের মধ্যেই সব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সক্ষম হব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন