ধান আবাদ করে লোকসানের শিকার হয়েছিলেন দিনাজপুরের হিলির চাষীরা। ওই লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন তারা। আমন ও বোরো চাষের মাঝামাঝি সময়ে জমি পরিত্যক্ত না রেখে তাতে সরিষার আবাদ করা হচ্ছে। ফলন ভালো হয় ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক ভালো দাম পাওয়ায় যায়, এ কারণে চাষীদের মধ্যে সরিষা আবাদের আগ্রহও বেশি।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৮৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর আগের মৌসুমে উপজেলায় সব মিলিয়ে ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। এবার উপজেলায় ১ হাজার ৩০০ টন সরিষা উৎপাদন হতে পারে। এখানে বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, টরি-৭ জাতসহ স্থানীয় বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস চাষীদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।
হিলির ছাতনি ও জালালপুর গ্রামের কৃষক সুজন হোসেন ও ফরিদুল ইসলাম জানান, সরিষা আবাদে ব্যয় তুলনামূলক কম। সময়ও কম লাগে। ক্ষেতে সরিষা লাগানোর পর একবার সেচ দিলেই চলে। সারের ব্যবহারও তুলনামূলক কম প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করেই আয় হয় ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। বিঘাপ্রতি লাভ থাকে ৭-৮ হাজার টাকা। এ কারণে চাষীদের মধ্যে সরিষা আবাদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়।
সুজন হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, আমন ও বোরো চাষের মাঝে সরিষা লাগানোর ফলে জমির উর্বরা শক্তি যেমন বাড়ছে, তেমনি সরিষা চাষ করে যে লাভ হয়, সেই টাকা দিয়ে আমরা অনায়াসে বোরো চাষ করতে পারি। এছাড়া সরিষা আবাদ করে পরিবারের খাবার তেলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। গোখাদ্য হিসেবে খৈল পাওয়া যাচ্ছে। বীজ সংগ্রহের পর ফেলে দেয়া গাছ রান্নার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যাচ্ছে। সব দিক থেকেই সরিষা চাষ লাভজনক।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা নাজনীন বণিক বার্তার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, স্থানীয় কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চলতি মৌসুমে ১৪০ জন প্রান্তিক কৃষককে বিনা মূল্যে সার ও বীজ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফলোআপ কর্মসূচির আওতায় ৩০০ কৃষককে সরিষার বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। সরিষার রোগবালাই দমন ও চাষাবাদের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো রয়েছে। সরিষা ক্ষেতে তেমন কোনো রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণও হয়নি। এ কারণে আশা করছি, সরিষার ভালো ফলন হবে। কৃষকরাও ভালো দাম পাবেন। এবারের মৌসুমে ভালো দাম পেলে আগামীতে সরিষার আবাদ আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।