প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরায় মত্স্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ৯ অক্টোবর। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে জাল ফেলতে পারবেন না জেলেরা। একই সঙ্গে বন্ধ থাকবে ইলিশের পরিবহন ও বিপণন। কিন্তু বরিশালে জেলেরা প্রশাসনের নজরদারির মধ্যেই বিশেষ কৌশলে ইলিশ ধরা অব্যাহত রেখেছেন। তারা নদীতে কারেন্ট জাল ফেলে তীরে বসে থাকছেন। পরে সুযোগ বুঝে তুলে আনছেন সেই জাল।
সরেজমিন হিজলা, মুলাদী, বাবুগঞ্জ, উজিরপুর ও গৌরনদীর মেঘনা, জয়ন্তী, সন্ধ্যা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে দেখা গেছে কৌশলে জেলেদের ইলিশ ধরার এ চিত্র। প্রশাসনের লোকজন টহল দিয়ে অন্যত্র গেলেই তারা নদীতে জাল ফেলছেন। তবে স্থানীয়রা জানান, অধিকাংশ জেলেই সরকারের নির্দেশনা মতো ইলিশ শিকার বন্ধ রেখেছেন। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই মা ইলিশ ধরছেন কিছু জেলে। তারা এ বছর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। প্রশাসনের লোকজন নদী থেকে জাল জব্দ করে নিয়ে এলেও পরবর্তী সময়ে নতুন জাল নিয়ে ইলিশ ধরা হচ্ছে। অনেকে নদীতে ডুবন্ত অবস্থায় কারেন্ট জাল পেতে তীরে জালের দড়ি নিয়ে বসে থাকছেন। সুযোগ বুঝে দড়ি টেনে তুলে আনছেন ইলিশসহ জাল।
এ বিষয়ে মুলাদী ও গৌরনদী মত্স্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৯ অক্টোবর থেকে উপজেলা প্রশাসন নদীতে টহল অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে কয়েক হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ ও পোড়ানো হয়েছে। তবে জেলেরা নদীতে জাল রেখে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধরা যাচ্ছে না। তার পরও ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আড়িয়াল খাঁ নদীতে অভিযান পরিচালনাকারী গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, প্রশাসনের টহল ট্রলার দেখলেই নদীতে জাল ডুবিয়ে দ্রুত নৌকা নিয়ে জেলেরা খালের মধ্যে ঢুকে পড়ে। মা ইলিশ নিধন বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জেলেদের সচেতন করে তুলতে পারেন।
এদিকে মত্স্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৯ অক্টোবর থেকে গত সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ছয় জেলায় মোট ৫১৩টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মামলা হয়েছে ১৮৬টি। তাছাড়া এ সময়ের মধ্যে ২ লাখের বেশি টাকা জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি ১৫৪ জেলেকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১৩ লাখ মিটার জাল ও প্রায় ছয় টন ইলিশ।
মত্স্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক আজিজুল হক বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশের ওপর নির্ভরশীল বিভাগের ২ লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা চলছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ মাছ ধরলে শাস্তি হিসেবে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা মত্স্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এখন পর্যন্ত বরিশালে যারা আটক হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই মৌসুমি জেলে। নিয়মিত জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরছেন না বললেই চলে।
তিনি আরো বলেন, বরিশাল জেলায় ৪৩ হাজার ৬৪৪ জেলেকে নিষেধাজ্ঞাকালীন ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হবে। মা ইলিশ নিধন ঠেকাতে বরিশালের সবখানেই মত্স্য বিভাগের নেতৃত্বে অভিযান চলছে। এ অভিযানে সহায়তা করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।