উপজেলা নির্বাচন

কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে প্রায় তিন গুণ: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যবসায়ী, যাদের মধ্যে কোটিপতি ৯৪ জন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোটিপতি ছিলেন ৩৭ জন। গত নির্বাচনের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪-এর প্রথম ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরতে টিআইবি গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ও গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, গবেষণা দলের সদস্য ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর রিফাত রহমান, কেএম রফিকুল আলম ও ইকরামুল হক ইভান।

টিআইবি জানিয়েছে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের মধ্যে ১৭ জন কোটিপতি এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে কোটিপতি রয়েছেন ৬ জন। গত নির্বাচনের সঙ্গে তুলনায় এ দুই পদের ক্ষেত্রেও কোটিপতির সংখ্যা তিন গুণের কাছাকাছি।

অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে এ কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় কোটিপতির হিসাবে তা আনা হয়নি বলে জানিয়েছে টিআইবি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫৬০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬১১ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮ মে।

টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৯ দশমিক ৮৬ শতাংশই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজকে। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন আইনজীবী (৬ দশমিক ৩২ শতাংশ) ও শিক্ষক (৪ দশমিক ১৫ শতাংশ)। একইভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদেরও প্রায় ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। 

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫২ শতাংশই গৃহিণী-গৃহস্থালির কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ ব্যবসায়ী। পরের অবস্থানে আছেন সমাজকর্মী-সংগঠক, এ হার ৫ শতাংশ। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষক (৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ) ও কৃষিজীবী (৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ)।

টিআইবি বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে গৃহিণী-গৃহস্থালি, কৃষিজীবী ও শিক্ষক প্রার্থীদের পরিমাণ দিন দিন কমছে।

প্রার্থীদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদের তালিকার শীর্ষে আছেন গোপালগঞ্জ সদরের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, তার মোট অস্থাবর সম্পদ ২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তালিকার দুই নম্বরে আছেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আনোয়ারুল ইসলাম, তার সম্পদ ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী, তার অস্থাবর সম্পদমূল্য প্রায় ১৯ কোটি টাকা। আতাহারের বাবা একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য। আতাহারের মতো আরো দুজন প্রার্থী এ তালিকায় রয়েছেন, যারা সংসদ সদস্যদের স্বজন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সুস্থ ধারায় রাজনীতিবিদরা নিজেদের বিলুপ্ত শ্রেণীর ভাবছেন। আমাদের আশঙ্কা, সুস্থ ধারার রাজনীতিবিদদের সরিয়ে ব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। তারা বিনিয়োগ করে নির্বাচনে আসবেন এবং পরে মুনাফা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলো মুনাফাকেন্দ্রিক হয়। ফলে এখানে জনস্বার্থের বিষয়ে প্রাধান্য থাকে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন