চার বছর পর পরিবর্তন হচ্ছে রেলের সময়সূচি

ঢাকা-চট্টগ্রাম ভ্রমণে সময় লাগবে ৪ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট

সুজিত সাহা I চট্টগ্রাম ব্যুরো

দীর্ঘ সময় পর বাংলাদেশ রেলওয়ের নতুন ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডব্লিউটিটি) প্রবর্তন হচ্ছে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া নতুন সময়সূচিতে ট্রেনের ভ্রমণ সময় কমিয়ে আনছে রেলওয়ে। পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব ট্রেনের ভ্রমণ সময় সর্বনিম্ন ৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কমিয়ে এনেছে রেলওয়ে। পূর্বাঞ্চলে ট্রেনের ভ্রমণ সময়ে বড় পরিবর্তন এলেও পশ্চিমাঞ্চল রেলের ট্রেনগুলোয় ভ্রমণ সময় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। 

রেলের সর্বশেষ ডব্লিউটিটি প্রণয়ন করা হয়েছিল ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি। ডব্লিউটিটি-৫২ চালুর পর দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন সময়সূচি প্রণয়ন করতে পারেনি রেলওয়ে। কভিড-১৯-এর কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা, রেলপথ উন্নয়নের চলমান প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় নতুন সময়সূচি প্রণয়ন করা হয়নি। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে সময়সূচি প্রণয়নের কথা থাকলেও প্রায় চার বছর পর ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে ডব্লিউটিটি-৫৩ চালু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে পরিবহন বিভাগ। এটি চালু হলে ভ্রমণ সময় কমে যাওয়ার পাশাপাশি ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা বাড়বে। এছাড়া প্রত্যেকটি কোচ/ইঞ্জিনের সক্ষমতার বাড়তি ব্যবহার কিংবা বিশ্রাম দেয়া সম্ভব হবে। 


রেলের পরিবহন বিভাগ প্রবর্তিত ডব্লিউটিটি-৫৩ অনুসারে, পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ সময় কমছে পূর্বাঞ্চলের উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি, মহানগর প্রভাতী, হাওর এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের। এছাড়া লোকাল ও কমিউটার ট্রেনেরও সময় কমে এসেছে। পূর্বাঞ্চলের ২৪ জোড়া ট্রেনের (উভয় পথে ৪৮টি ট্রেন) সর্বনিম্ন ৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভ্রমণ সময় কমছে। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের ২৮ জোড়া ট্রেনের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে সময় কমছে ৫-১০ মিনিট। পশ্চিমাঞ্চলের লাইনগুলো সিঙ্গেল হওয়ায় নতুন সময়সূচিতে ভ্রমণ সময় তেমন একটা কমছে না। 

নতুন চালু হতে যাওয়া ডব্লিউটিটি-৫৩ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ সময় কমছে ঢাকা-সিলেট রুটের উপবন ট্রেনের (৭৩৯)। ৫২ নং টাইম টেবিলে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে ৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগলেও নতুন সময়সূচিতে লাগবে ৭ ঘণ্টা। অর্থাৎ আন্তঃনগর ট্রেনটির ভ্রমণ সময় কমছে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময় কমছে মহানগর গোধূলি (৭০৩) ট্রেনের। নতুন নিয়মে ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাত্রী পরিবহন করবে ৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে। অর্থাৎ ট্রেনটির মাধ্যমে ভ্রমণ সময় কমেছে ১ ঘণ্টা। অন্যদিকে মহানগর প্রভাতী (৭০৪) ট্রেনটি ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাত্রী পরিবহন করবে। এ ট্রেনের ভ্রমণ সময় কমছে ৫৫ মিনিট। চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন উভয় পথে যথাক্রমে ৯ থেকে ৯ ঘণ্টা ২০ মিনিটে যাত্রী পরিবহন করলেও নতুন সময়সূচিতে ভ্রমণ সময় কমছে ৫০ মিনিট করে। এছাড়া ঢাকা-মোহনগঞ্জ-ঢাকা রুটের মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের (উভয় পথে) ভ্রমণ সময় ৪৫ মিনিট কমে ৫ ঘণ্টা ৫ মিনিট থেকে ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিট, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের (৭৮১) ভ্রমণ সময় ৫৫ মিনিট, হাওর এক্সপ্রেসের ৪০ মিনিট, তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২) ৫০ মিনিট, তূর্ণা (৭৪১) ৩০ মিনিট, উপবন (৭৪০) ৩০ মিনিট, উদয়ন (৭২৪) ৩০ মিনিট, উপকূল (৭১১) ২৫ মিনিট, উপকূল (৭১২) ৩০ মিনিট সময় কমছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের মহানগর এক্সপ্রেসের ভ্রমণ সময় ৭২১ নং ট্রেনে ৩০ মিনিট এবং ৭২২ নং ট্রেনের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় কমছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের আরেক জোড়া ট্রেন চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময় কমছে ১ ঘণ্টারও বেশি। ৮০২ নং চট্টলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ভ্রমণ সময় আগে ৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ছিল, বর্তমানে ৬ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে যাত্রী পরিবহন করবে। অর্থাৎ সময় কমছে ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট। অন্যদিকে ৮০১ নং চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটির আগের ভ্রমণ সময় ছিল ৭ ঘণ্টা ২০ মিনিট। বর্তমানে এ ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগবে ৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট, অর্থাৎ ভ্রমণ সময় কমবে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট।

তথ্যমতে, আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে আংশিক বিরতিহীন (বিমানবন্দর স্টেশন) চলাচলরত জনপ্রিয় ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট এবং সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন সর্বনিম্ন ৫ ঘণ্টা ১০ ও ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে যাত্রী পরিবহন করত। নতুন সময়সূচিতে চারটি ট্রেনই প্রতিদিন মাত্র ৪ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়া নতুন সময়সূচিতে তিস্তা এক্সপ্রেস (৭০৭ নং ট্রেন), ৭০৯ ও ৭১০ পারাবত এক্সপ্রেস (উভয় পথে), ৭৪৯ এগারসিন্দুর গোধূলি, ৭৭৮ হাওর এক্সপ্রেস, ৭৮৬ বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ভ্রমণ সময় কমছে ১০ মিনিট করে। ৭৫০ নং এগারসিন্দুর গোধূলি ট্রেনের ২০ মিনিট, ৭৪৪ নং ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ২৫ মিনিট, ৭৩৫ নং অগ্নিবীণা ট্রেনের ২৫ মিনিট, ৭৩৬ নং অগ্নিবীণা ২০ মিনিট ভ্রমণ সময় কমছে। 

এদিকে ১০ মিনিট করে ভ্রমণ সময় কমছে তিস্তা এক্সপ্রেস (৭০৭), পারাবত (৭০৯), পারাবত (৭১০), এগারসিন্দুর প্রভাতী (৭৩৮), হাওর (৭৭৮), বিজয় (৭৮৬) ট্রেনের। ১৫ মিনিট করে ভ্রমণ সময় কমছে যথাক্রমে উদয়ন (৭২৩), মেঘনা (৭২৯ ও ৭৩০), যমুনা (৭৪৬), কিশোরগঞ্জ (৭৮২), সোনার বাংলা (৭৮৭) এক্সপ্রেস ট্রেনের। ২০ মিনিট করে ভ্রমণ সময় কমছে অগ্নিবীণা (৭৩৬), সোনার বাংলা (৭৮৮) এক্সপ্রেস ট্রেনের। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন