কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে প্রযুক্তি শিল্পে কর্মী ছাঁটাই বাড়ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

অটোমেশন কিছু পেশার ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগের কারণ হতে পারে ছবি: নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড

নতুন উদ্ভাবন ও পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সুনাম থাকলেও খানিকটা বিপত্তি হয়ে উঠেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), যা প্রযুক্তি খাতের কর্মসংস্থানের ওপর রীতিমতো প্রভাব ফেলছে। আগে যেমন মনে করা হয়েছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের কাজগুলোকে খুব বেশি প্রতিস্থাপিত করতে পারবে না। কিন্তু এআইয়ের প্রভাবে সিলিকন ভ্যালিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। কর্মীদের মধ্যেও চাকরি হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টেক টাইমস। 

সম্প্রতি প্রকাশিত সিএনএনের প্রতিবেদনে চেগ, আইবিএম, ড্রপবক্সসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুনর্মূল্যায়নে উল্লেখযোগ্য হারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে মানুষ দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন কাজ স্বয়ংক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়েছে। এ অটোমেশন চাকরির স্থানচ্যুতি এবং নির্দিষ্ট কিছু পেশার ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলো এমন এক ধরনের পরিবর্তনশীল পরিবেশকে নির্দেশ করে, যার সঙ্গে মানিয়ে চলতে প্রতিষ্ঠানেরও পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন পড়বে। এতে গুরুত্ব পাবে এআইয়ের দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা। 

আমেরিকার শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানি চেগ সম্প্রতি এর রেগুলেটরি ফাইলিংয়ে উল্লেখ করেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশলের সঙ্গে আরো ভালোভাবে সামঞ্জস্য তৈরির প্রয়াসে ৮০ জন কর্মীকে তারা ছাঁটাই করতে পারে, যা তাদের মোট কর্মীর ৪ শতাংশ। ব্লুমবার্গের বরাতে টেকটাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় আইবিএমের প্রধান নির্বাহী অরবিন্দ কৃষ্ণা স্বীকার করেছেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কর্মসংস্থান হ্রাস করবে বা কিছু কাজের জায়গা নিয়ে নেবে—এমন চিন্তা থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে, এমন সব খাতে তারা পেশাদার কর্মী নিয়োগের বিষয়টি বিলম্বিত করেন। 

এদিকে ফাইল হোস্টিং পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ড্রপবক্সের চাকরি ছাঁটাইয়ের ঘোষণাটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রাথমিক পর্যায়ের পণ্য বিকাশের ক্ষেত্রে দক্ষতার নতুন সংমিশ্রণের প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এরই মধ্যে হাজার হাজার লোক চাকরি হারিয়েছেন, যার নেপথ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। 

ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট ফার্ম চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাস পরিচালিত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ছাঁটাইসংক্রান্ত সমীক্ষা অনুসারে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে গত মে মাসে তিন হাজার নয়শো লোক চাকরিচ্যুত হয়েছে। অচিরে এটি কতটা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কর্মসংস্থান পুনর্গঠনকে প্রভাবিত করবে—তা এ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায়। 

বিদ্যমান বাস্তবতায় সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশের পাশাপাশি ডিজিটাল পরিষেবা খাতে ভোক্তা চাহিদা পরিবর্তনের কারণে ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই বাড়ছে। সিলিকন ভ্যালি গবেষণা চালাচ্ছে যে কীভাবে এ দ্বৈত বাস্তবতার মধ্যে সংস্থাগুলো সামঞ্জস্য ধরে রাখতে পারে। রাতারাতি কর্মীবাহিনী বা কোনো বিভাগের বিলুপ্তি নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্যতা ব্যবহারের জন্য সম্পদের পুনর্বন্টন নিয়ে কাজ করছে তারা। 

কম্প্রিহেনসিভডটআইওর বিশ্লেষণ অনুসারে, জ্যেষ্ঠ সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের মধ্যে যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা মেশিন লার্নিংয়ে বিশেষজ্ঞ, তারা কম অভিজ্ঞদের তুলনায় বেশি অর্থ উপার্জন করেন। এ অবস্থায় অধ্যাপক ওয়াং তার ছাত্রদের প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দেন জেনারেটিভ এআই টুলসের ব্যবহার সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।

তবে সিএনবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে প্রত্যেকের অবশ্য এআই বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে কর্মীদের বুঝতে হবে কীভাবে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং পরিবর্তিত শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে হয়। কেননা দৈনন্দিন কাজের মধ্যে সফলভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন