রেকর্ড সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার পথে চীন

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের হেনান প্রদেশে একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছবি: রয়টার্স

চীনে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চলতি বছর ৩০ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় নতুন করে দেশটির গ্রিডে যুক্ত হতে পারে ৯৫-১২০ গিগাওয়াট সক্ষমতা। এর মধ্য দিয়ে বার্ষিক সক্ষমতা রেকর্ড স্পর্শ করবে। চীনের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

দেশটির ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনইএ) দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ২০২১ সালের তুলনায় বেড়েছে ২১ শতাংশ। চলতি বছর উৎপাদন আরো বাড়বে।

চীন বিশ্বের শীর্ষ সৌরপণ্য ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদক দেশ। গত বছর নতুন কিছু প্লান্টের মাধ্যমে দেশটির গ্রিডে ৮৭ দশমিক ৪১ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতা যুক্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে মোট সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ৩৯২ দশমিক ৬১ গিগাওয়াটে।

বায়ু টারবাইন ও সৌর প্যানেল ব্যবহার করে দেশের আবাসিক বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় পুরোটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে চীন। এর মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে তারা।

চীন ফটোভোলটাইক ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিআইএ) চেয়ারম্যান ওয়াং বোহুয়া সম্প্রতি একটি সম্মেলনে বলেন, ‘বিনিয়োগ ব্যয় কিছুটা কমলেও চীনে সৌরবিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর উন্নয়ন বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রদেশে জ্বালানি মজুদাগার ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে স্থানীয় সরকারের নানা বাধ্যবাধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। ভূমি ও পানিসম্পদ ব্যবহারে বিধিনিষেধও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কৃষিজমি সংরক্ষণ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’

দেশটির সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যখন খুব দ্রুত বাড়ছে, তখন দেশটির সৌরপণ্য রফতানিকারকরা অনেক বেশি বাণিজ্যিক বিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের মতো গন্তব্যগুলোয় কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

এ সম্পর্কে ওয়াং বলেন, ‘বিদেশী বাজার ধরতে চাওয়া চীনের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর জন্য বণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ক্রমবর্ধমান অসুবিধা তৈরি করছে। তাছাড়া এসব দেশে স্থানীয় উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্রুত বিকাশ চীনের সৌর উৎপাদন শিল্পকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে।’

গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে সৌরসহ অন্যান্য পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পেছনে দেশটির অভিযোগ ছিল চীন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজ করাচ্ছে। এ অভিযোগ চীন থেকে রফতানি হওয়ায় তিন গিগাওয়াট সৌর মডিউলও জব্দ করে মার্কিন শুল্ক কর্তৃপক্ষ।

সিপিআইএর তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে চীন প্রায় ৩৬ দশমিক ৩ গিগাওয়াট সোলার ওয়েফার ও ২৩ দশমিক ৮ গিগাওয়াট সোলার সেল রফতানি করে। এক মাসের ব্যবধানে রফতানি ৬১ শতাংশ এবং এক বছরের ব্যবধানে ১৩১ শতাংশ বেড়েছে।

গত বছর চীনের সৌর মডিউল রফতানি ধীরগতিতে হলেও বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। বিভিন্ন দেশে মডিউল প্লান্ট নির্মাণ বেড়ে যাওয়ায় রফতানি ইতিবাচক ছিল। এ সম্পর্কে ওয়াং বলেন, ‘চীনের সৌরপণ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের অবস্থান আরো জোরদার করা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশ তাদের স্থানীয় শিল্পকে এগিয়ে নিতে নীতি প্রণয়ন করছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।’

ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে সাম্প্রতিক সময়ে শতকোটি ডলার বিনিয়োগ করছে চীন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন