জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি

যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারিতে আলিবাবার ক্লাউড ইউনিট

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের ঝেইঝাং প্রদেশে অবস্থিত আলিবাবার সদর দপ্তর ছবি: রয়টার্স

জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে চীনের বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে এবার -কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার ক্লাউড ব্যবসায় নজরদারি করছে বাইডেন প্রশাসন। বিষয়ে অবগত তিনটি সূত্রে তথ্যটি জানা গেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় নজরদারি বাড়ানোর অংশ হিসেবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আলিবাবা কীভাবে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত, লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সংরক্ষণ করছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতেই সূক্ষ্ম তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চীন সরকার এসব তথ্য ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে কিনা, সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে বলে সূত্রের তথ্যে জানা গেছে।

ক্লাউড ব্যবসার মাধ্যমে সৃষ্ট ঝুঁকি কমাতে এবং দেশে-বিদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সম্পূর্ণভাবে পরিষেবাটি ব্যবহার নিষিদ্ধে নিয়ন্ত্রকরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আলিবাবার ক্লাউড ব্যবসার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য বিভাগ অবগত ছিল। তবে জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পরই বাইডেন প্রশাসন তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক এক কর্মকর্তা কথা জানান।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আলিবাবার ক্লাউড ব্যবসা খুবই ছোট। বার্ষিক আয়ের পরিমাণও মাত্র কোটি ডলারের কাছাকাছি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকরা যদি দেশটির বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলিবাবা ক্লাউডের লেনদেন বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে এটি প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ফলে কোম্পানির সুনামেও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের এক মুখপাত্র জানান, লেনদেন চালু বা বন্ধ করার বিষয়ে এজেন্সি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। চীনা দূতাবাস আলিবাবারও মন্তব্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এমন কিছু সমস্যার আভাস দিয়ে উল্লেখ করে, আলিবাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠানের চুক্তি রয়েছে, তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা নিষিদ্ধ হতে পারে। সেই সঙ্গে আমাদের ক্লাউড পরিষেবায় যুক্ত চুক্তির আওতায় দায়িত্ব পালনও প্রভাবিত হতে পারে।

আলিবাবার ক্লাউড ব্যবসার তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি। চীন, রাশিয়া, কিউবা, উত্তর কোরিয়া ভেনিজুয়েলার মতো দেশের টেলিকম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলোর কার্যক্রম লেনদেন বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসন এটি চালু করেছিল। একটি সূত্র জানায়, বিভাগটি মূলত চীনের ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে নজরদারি নিশ্চিতে গঠন করা হয়েছে। বিশেষ করে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে তথ্য চুরি অনধিকার প্রবেশের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগ নেয়া হয়।

২০২০ সালের আগস্টে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন আলিবাবাসহ ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী বিভিন্ন চীনা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীদের ব্যক্তিগত তথ্য, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি ক্লাউডভিত্তিক সিস্টেমে সংরক্ষণ বন্ধে এটি কার্যকর করা হয়। অন্যদিকে সাইবার আক্রমণের জন্য ক্লাউড সার্ভারকে অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়। কেননা হ্যাকাররা আক্রমণ চালানোর পর উত্পত্তিস্থল বন্ধ করে দিতে পারে এবং বিশাল ক্লায়েন্ট নেটওয়ার্কে প্রবেশের সুযোগ দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন