দৈনিক লেনদেন বেড়েছে ৫৫ শতাংশ

পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি সপ্তাহে টানা দরপতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। গত তিন কার্যদিবসে ১৪৭ পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স। গতকাল ডিএসইর সূচক কমলেও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক লেনদেন দুটোই কমেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে হাতে নগদ অর্থ জমা রাখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যারা শেয়ার বিক্রি করছেন তাদের অধিকাংশই সে অর্থে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। পুঁজিবাজারে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান, তিন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) সাবস্ক্রিপশন, আসন্ন মুদ্রানীতি কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনের মতো বিষয়গুলো বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া বাজারে গত এক বছরে টানা উত্থানের কারণে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে তাদের মূলধনি মুনাফা উঠিয়ে নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে বাজারে বিনিয়োগকারীরা বিক্রয় প্রবণতার মধ্যে রয়েছেন বলে মনে করছেন তারা।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর ১৩ মিনিট পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক। এরপর সূচকে নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হয়। লেনদেন শুরুর ৪৫ মিনিট পর থেকেই আবারো ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে সূচক এবং একসময় ৪২ পয়েন্ট যোগ হয় সূচকে। অবশ্য এরপর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপে পয়েন্ট হারাতে শুরু করে সূচক। শেষ পর্যন্ত দিনশেষে ৪৪ পয়েন্ট কমে হাজার ৮৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স, যা এর আগের কার্যদিবসে ছিল হাজার ৮৮২ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বেক্সিমকো লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), ওয়ান ব্যাংক গ্রামীণফোনের শেয়ার।

ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে প্রায় পয়েন্ট কমে হাজার ৪৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল হাজার ৪৬০ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ১৭ পয়েন্ট কমে গতকাল হাজার ৫৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিনশেষে যা ছিল হাজার ৫৮৫ পয়েন্টে।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৯৬ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৭টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ৮৮টির, কমেছে ২৪৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২০ দশমিক ৫১ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ব্যাংক খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দশমিক ৭৮ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ রসায়ন খাত। দশমিক ৩২ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চামড়া খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দখলে ছিল লেনদেনের দশমিক ৬৩ শতাংশ। এছাড়া বিবিধ খাতের দখলে ছিল দশমিক ৯৬ শতাংশ। গতকাল চামড়া খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি দশমিক শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। ঋণাত্মক রিটার্নের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল সেবা আবাসন খাত।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সুজ, বেক্সিমকো লিমিটেড, জেনেক্স ইনফোসিস, জিএসপি ফাইন্যান্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনালী পেপার মিলস, সাইফ পাওয়ারটেক সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স।

সমাপনী দরের ভিত্তিতে গতকাল ডিএসইতে দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ সিকিউরিটিজ ছিল ফরচুন সুজ, এএমসিএল (প্রাণ), এপেক্স ফুটওয়্যার, ফার্মা এইড, অ্যাপেক্স ফুড, লিবরা ইনফিউশন, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, রংপুর ফাউন্ড্রি, বাটা সুজ লিন্ডে বিডি।

অন্যদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর কমার শীর্ষে থাকা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে শ্যামপুর সুগার, জিল বাংলা সুগার, ওয়ান ব্যাংক, মেঘনা পিইটি, জিবিবি পাওয়ার, আইএসএন, জুট স্পিনার্স, এফএএস ফাইন্যান্স, ইনটেক লিমিটেড সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।

সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ১০৪ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১২ হাজার ১১২ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৭০টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭১টির, কমেছে ১৭৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৪টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ২৫ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৩৫ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন