বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে গতকাল বড় পতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এদিন ১ শতাংশের বেশি পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স। এর আগের ৫ কার্যদিবসে টানা কমেছে সূচক। সব মিলিয়ে গত ছয় কার্যদিবসে ২৭০ পয়েন্ট হারিয়েছে সূচক। পাশাপাশি এ সময় দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে। এদিকে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হলেও কিছুক্ষণ পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপে পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। এক সময় ১২৮ পয়েন্ট কমে যায় সূচক। অবশ্য শেষের দিকে ক্রয়চাপ বাড়ার কারণে শেষ পর্যন্ত ৮৯ পয়েন্ট কমে ৭ হাজার ৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৭ হাজার ১৮৬ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটিবিসি), বেক্সিমকো
ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা যাচ্ছে। এ সময়ে অনেক কোম্পানির শেয়ারদরই বেড়েছে। এতে বেশকিছু ব্যাংকের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের দর বেড়েছে। এ কারণে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে ব্যাংকের পোর্টফোলিও থেকে কিছু শেয়ার বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরাও মূলধনি মুনাফা তুলে নিতে শেয়ার বিক্রি করছেন। এসব কারণে কয়েকদিন ধরেই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। যার প্রভাবে সূচকের টানা পতন হচ্ছে।
ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে ২১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৫২৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৫৪৬ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ২৭ পয়েন্ট কমে গতকাল ২ হাজার ৬৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৭০৫ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ৩৩টির, কমেছে ৩২৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৭টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ দখলে নিয়েছে ব্যাংক খাত। ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত। আর ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বিএটিবিসি, ফরচুন সুজ, বেক্সিমকো লিমিটেড, আইএফআইসি, এনআরবিসি ব্যাংক, জেনেক্স ইনফোসিস ও পাওয়ারগ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।
গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে গোল্ডেন সন, এসবিএসি ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড, সোনালী পেপার, ন্যাশনাল হাউজিং, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, আরামিট লিমিটেড ও ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং।
ডিএসইতে গতকাল সবচেয়ে বেশি দর কমেছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, বিচ হ্যাচারি, ঢাকা ডায়িং, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, উসমানিয়া গ্লাস, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, বিডি ওয়েল্ডিং, পেপার প্রসেসিং, আইএলএফএসএল ও বিডি মনোস্পুল পেপার।
