বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

শীর্ষ তিন পদের অর্ধেকই শূন্য

সাইফ সুজন

আইন অনুযায়ী দেশের প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি, প্রো-ভিসি ট্রেজারার থাকার কথা। যদিও আইন মানছে না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব পদে অস্থায়ী বা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হলেও কিছু প্রতিষ্ঠানে সেটিও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, প্রো-ভিসি ট্রেজারার তিনটি পদের অর্ধেকই শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বছরের পর বছর নয়; দশকের পর দশক এসব পদে নিয়োগ দিচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে এসব পদে নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে না খোদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ড।

ইউজিসি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী একাডেমিক কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য। এছাড়া একাডেমিক, প্রশাসনিক আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রো-ভিসি ট্রেজারার পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইন অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ট্রেজারার নিয়োগ দেবে সরকার। যদিও তা পূর্ণাঙ্গভাবে মানছে না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত ভিসি, প্রো-ভিসি ট্রেজারারের পূর্ণাঙ্গ পর্ষদ রয়েছে, সম্প্রতি সেগুলোর একটি তালিকা করেছে ইউজিসি। সেখানে দেখা যায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভিসি, প্রো-ভিসি ট্রেজারার মিলে তিনশর কিছু বেশি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেয়া উপাচার্য নেই। উপ-উপাচার্য পদ শূন্য রয়েছে ৮৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ট্রেজারার নিয়োগ দেয়নি ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়। সে হিসাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ পদের অর্ধেকের বেশি পদই শূন্য রয়েছে।

প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্যানেল প্রস্তাবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি, প্রো-ভিসি ট্রেজারার নিশ্চিত করতে কয়েক বছর ধরে জোর দেয়া হচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে বেশ গড়িমসি করছে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে বছরের পর বছর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান চলছে কীভাবে।

পূর্ণ পর্ষদ রয়েছে মাত্র ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ে: এদিকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত ভিসি, প্রো-ভিসি ট্রেজারারের পূর্ণাঙ্গ পর্ষদ রয়েছে, এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকাও করেছে ইউজিসি। সেখানে দেখা গেছে মাত্র ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ তিন পদের পর্ষদ আইন অনুযায়ী পূর্ণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

এদিকে শীর্ষ পদের শূন্যতা দূর করতে দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাগাদা দিচ্ছে সরকার। গত কয়েক মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসি এসব পদ পূরণের জন্য প্যানেল আহ্বান করে কয়েক বার চিঠি দিয়েছে। যদিও সে আলোকে প্যানেল পাঠাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আবার যেসব প্যানেল পাঠানো তার অধিকাংশই ভুয়া অপূর্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে এসব পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুযায়ী উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারার নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল প্রস্তাব পাঠাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। প্যানেলে পাঠানো ব্যক্তিদের যোগ্যতা বিষয়ে আইনে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে প্যানেল পাঠাচ্ছে, তা বেশির ভাগ অপূর্ণাঙ্গ ভুয়া। তাদের অভিযোগ, অনেক সময় পছন্দের ব্যক্তিদের যোগ্যতা ঠিক রেখে বাকিদের মধ্যে কম যোগ্য বা অযোগ্যদের নাম প্রস্তাব করা হয়।

প্রসঙ্গে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক . মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, আইনে পদভিত্তিক যোগ্যতা বিষয়ের শর্ত বাংলা ভাষায় স্পষ্টভাবে বর্ণনা রয়েছে। এরপর যে প্যানেলগুলো পাঠানো হচ্ছে তার বেশির ভাগই অপূর্ণাঙ্গ। দেখা গেছে একজনের শর্ত কভার করে বাকিদের ঠিক নেই। এজন্য প্যানেল ফেরত পাঠাতে হয়। এতে সময় শ্রমের অপচয় হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ধরনের প্যানেল কাম্য নয়। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন