অর্থনৈতিক উত্তরণ

আগামী বছরের অপেক্ষায় থাকাদের আশাভঙ্গ হতে পারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

যেসব বিনিয়োগকারী আশা নিয়ে বসে ছিলেন যে আগামী বছরের মধ্যেই কার্যকর প্রতিষেধকের সর্বজনীন প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতি আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে, তাদের এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার সময় এসেছে। কারণ শুধু প্রতিষেধক আবিষ্কার করলেই হবে না, সেগুলোর কার্যকারিতাও নিশ্চিত হতে হবে। আবার সেগুলো মানবদেহে প্রয়োগ যথেষ্ট নিরাপদ কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগকে নিরুৎসাহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণে বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করে বলছেন, বিশ্বকে পুরোপুরি করোনামুক্ত করতে হলে আরো দীর্ঘ কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।

কভিড-১৯ মহামারী পুরো বিশ্বকে জনস্বাস্থ্য অর্থনীতি উভয় দিক থেকেই পঙ্গু করে দিয়েছে। জনস্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি নিশ্চিতভাবেই আগামী কয়েক শতক বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম চর্চিত বিষয় হয়ে থাকবে। আর অর্থনৈতিক ক্ষতি একসময় হয়তো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, তবে তা যে দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রক্রিয়া হবেসে বিষয়ে দ্বিমত করার মতো মানুষ খুব কমই রয়েছে।

১৯৩০-এর দশকের পর ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এর কারণ আর কিছুই নয়, নভেল করোনাভাইরাস। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এই প্রাণঘাতী ভাইরাস অর্থনীতির গতি রুদ্ধ করেছে। পঙ্গু করে দিয়েছে ব্যবসার প্রায় সব খাতকেই। চাহিদা, সরবরাহ শৃঙ্খল, ভোক্তাব্যয়সবকিছুকেই স্থবির করে দিয়েছে।

অবস্থায় অর্থনীতিকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হলো জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কারণ যতদিন না কভিড-১৯ মহামারী পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে, ততদিন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটবে না। তার প্রমাণ এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। পশ্চিমা দেশগুলো করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে যেই না অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ফিরতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই মহামারীর দ্বিতীয় প্রবাহের আঘাত এসেছে। ফলে দেশগুলোয় পুনরায় লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য জীবন-জীবিকাও ফের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে কিছু ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। কিছু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনোটিরই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি। ফলে কার্যকর ভ্যাকসিন বাজারে আসতে আরো সময় লাগবেএটা নিশ্চিতভাবেই বলে দেয়া যায়।

তবে বাজারে এলেও ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায় প্রথম দফায় এসব প্রতিষেধকের প্রয়োগ কতটা কার্যকর প্রমাণ হবে, ৭০০ কোটির বেশি বৈশ্বিক জনসংখ্যার কাছে কতটা সহজে এসব ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে, কতজন এই প্রতিষেধক নিতে রাজি হবে ইত্যাদি।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ এসব প্রশ্নের জবাবের ওপর নির্ভর করছে। কারণ নতুন করে সংক্রমণ শুরু হওয়ার অর্থ হলো জনস্বাস্থ্য নিয়ে পুনরায় আতঙ্ক তৈরি হওয়া এবং সরকারগুলো কর্তৃক ফের বিধিনিষেধ আরোপ করা। এতে দৈনিন্দিন জীবনযাত্রা অর্থনীতি দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অবশ্য সফল কার্যকর ভ্যাকসিন প্রয়োগ হলেই যে অর্থনীতিতে তার ত্বরিত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা নয়। ম্যানুলাইফ ইনভেস্টমেন্টের পোর্টফোলিও ম্যানেজার ক্রিস চ্যাপম্যান অন্তত সেটাই মনে করেন। তিনি বলেন, করোনাপূর্ব সময়ে অথবা অথনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে যেতে আমাদের অন্তত এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি হবে ধীরগতির।

এর আগের আর্থিক সংকটগুলোয় অর্থনৈতিক উত্তরণের প্রক্রিয়াটি নির্ভর করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকার আর্থিক প্রণোদনা দিলে অর্থনীতি আবার ট্র্যাকে ফিরে আসবেএমন বিশ্বাস চলে আসছে দশকের পর দশক।

কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ এবার অর্থনৈতিক উত্তরণের জন্য কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলছে না, বিজ্ঞানী-গবেষকদের সাফল্যের ওপরও নির্ভর করতে হচ্ছে। কবে তারা কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কারের ঘোষণা দেবেন, কবে সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হবে, আর কবে গণহারে সেগুলো প্রয়োগ করা শুরু হবে, তার ওপরও অর্থনৈতিক উত্তরণ নির্ভর করছে।

আর যেহেতু নিরাপদ কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, সেহেতু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতেই হবে। ব্লুমবার্গ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন