ওয়েবিনারে বক্তারা

উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে কভিড পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নাগরিকদের আস্থাহীনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের মধ্যে আস্থাহীনতা কভিড পরবর্তী বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘ভবিষ্যত পুনর্গঠনে মহামারী পরবর্তী বিশ্বে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারের বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। 

কভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় এখনই যথাযথ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলেন তারা। তারা বলছেন, কভিড-১৯ ভঙ্গুর স্বাস্থব্যবস্থা, দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক ও লিঙ্গীয় অসমতাসহ আরো নানামুখী সমস্যার জন্ম দিচ্ছে যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিশেষ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে। আর তাই কভিড পরবর্তী সময়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের মধ্যে যেন আস্থাহীনতা তৈরি না হয় সেদিকে বক্তারা বিশেষ নজর দিতে বলেন। 

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিস ও অস্ট্রেলিয়ার সানসাইন কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। 

সেন্টার ফর পিস স্টাডিস-এর পরামর্শক ড. ক্যাথরিন লি-এর বক্তব্যের মাধ্যমে ওয়েবিনারের সূচনা হয়। 

ড. ক্যাথরিন লি তার বক্তব্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে পরবর্তী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করেন। কভিড পরবর্তি বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার প্রয়োজন আরো বেশি বলে তিনি মনে করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা নতুন করে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও সংস্কার এর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে জাতীয় পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করে কোভিড পরবর্তী অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন

, ‘আমাদের সামগ্রিক সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে এবং প্রবৃদ্ধি ঠিক রেখেই কভিড পরবর্তী সমস্যাগুলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সমাজের সকল স্তরের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য একযোগে সমন্বিত প্রচেষ্টা নেয়ার কথা বলেন।

ইউএনডিপির বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী সামাজিক সুরক্ষার ওপর জোর দিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে বলেন। 

কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে গ্রিফিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তপন সরকার বলেন, কভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ও সহযোগিতা ভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে যেন স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি দারিদ্র্য, অসমতা ও শিক্ষাখাতের চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে এসআইপিজির পরামর্শক অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, কভিড-১৯ আমাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থার ওপর জনমনের ভরসার অভাবকে প্রকটভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। যে কারণে কভিড পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাস্থ্য খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই।

অস্ট্রেলিয়ার সানসাইন কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. শরীফ আহমেদ মুকুল বলেন, কভিড পরবর্তী নানাবিধ সমস্যা নিয়ে কাজ করার সময় পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) জ্যেষ্ঠ ফেলো শহীদুল হক বলেন, জনগণের দাবি ও স্বার্থকে সামনে রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে নতুনভাবে বিবেচনায় আনতে হবে। প্রয়োজনে নতুন করে বৈশ্বিক ডায়ালগ তৈরির প্রচেষ্টা হাতে নিতে হবে। 

সমাপনী বক্তব্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, কভিড-১৯ নানা রকম সমস্যা নিয়ে আসছে, একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি একটি বিশাল অংশের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা বিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হবার প্রতি জোর দেন। 

ড. বুলবুল সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক, সিপিএর সমন্বয়ক ড. এম জসিম উদ্দিনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পেশাজীবী ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন