১২০ কভিড হাসপাতালের ৭১টির ব্যবস্থাপনাই নাজুক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্বল তদারকিরই প্রতিফলন

দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে নির্ধারণ করা ১২০টি হাসপাতালের মধ্যে ৭১টি হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনাই সন্তোষজনক অবস্থানে নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ফ্যাসিলিটি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেডিনেস র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট চেকলিস্ট ফর কভিড-১৯ শীর্ষক তালিকায় চিত্র ফুটে উঠেছে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবুজ তালিকায় রয়েছে মাত্র ৪৯টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। বাকি ৭১টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পিছিয়ে থেকে হলুদ লাল চিহ্নিত তালিকায় অবস্থান করছে। এর মধ্যে মোট স্কোরে ৩০-এর কম পয়েন্ট নিয়ে ১০টি হাসপাতাল আছে লাল চিহ্নিত তালিকায়। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো হলুদ চিহ্নিত তালিকায় অবস্থান করছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও খুব বেশি ভালো না। বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে সেবার চিত্র আগে থেকেই সঙিন ছিল, করোনা তাকে আরো প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। সংক্রমণ ক্রমে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক সতর্কতা এবং সরকারের জাতীয় উদ্যোগের আওতায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা বিশেষায়িত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও সেসব হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা এবং ডাক্তার-নার্সদের অনুপস্থিতি রোগীর চরম অবহেলার শিকার হওয়ার ঘটনাবলি দেখে সন্দেহভাজন রোগীরা নিজেদের পরীক্ষা চিকিৎসার আওতায় যেতে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে। এভাবেই অসংখ্য রোগী করোনার উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে অথবা মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে এসে মৃত্যুবরণ করছে। সন্দেহভাজন রোগীদের বিলম্বিত পরীক্ষা এবং পরীক্ষার ফলাফল পেতে সময়ক্ষেপণের কারণে আরো অসংখ্য মানুষ সেসব রোগীর সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হলেও তারা তা জানতে বা বুঝতেও পারছে না।

করোনা চিকিৎসার জন্য রাজধানীসহ দেশের অন্যত্র অবস্থিত বেশকিছু হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু সেসব হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সেবা চিকিৎসা তেমন একটা হচ্ছে না। দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র একেবারে কম নেই। আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালও আছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা, সেবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকারি কিছু হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি কিছু হাসপাতালও এগিয়ে আসতে পারেএমন ধারণা খুবই স্বাভাবিক। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর তরফে এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছিল বটে, তবে তাদের ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। করোনা কারণ যুক্ত হওয়ায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যেতে পারে, যার লক্ষ্য হবে করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করা। অন্যদিকে সাধারণ অন্যান্য চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয়ে গড়ে তুলতে হবে পৃথক ব্যবস্থাপনা, যার লক্ষ্য হবে করোনাবহির্ভূত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। করোনা আক্রান্ত অন্যান্য দেশে কীভাবে করোনা অন্যান্য রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বা হচ্ছে, প্রয়োজনে সেটাও বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। স্বীকার করতেই হবে, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভাগ যথেষ্ট পারঙ্গমতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। সর্বত্রই একটা ---- লক্ষ করা যাচ্ছে। ডাক্তার, নার্স চিকিৎসাকর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তাই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। এতগুলো ডাক্তার-নার্স-চিকিৎসাকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব অন্যদের ওপর পড়া খুবই সম্ভব। করোনাযুদ্ধের একেবারে সামনের সারির সৈনিকদেরই যদি এতটুকু নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে যুদ্ধে বিজয় অর্জন কীভাবে সম্ভব হবে? করোনার কারণ দেখিয়ে সাধারণ অন্যান্য রোগের চিকিৎসার প্রতি অবহেলা প্রদর্শনের কোনো অবকাশ নেই। সাধারণ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালের নাজুক ব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছে রোগীরা। মৃত্যুহারও বেড়ে উঠছে কারণে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরো সক্রিয়তা প্রয়োজন। তদারকি জোরদার এবং নির্দিষ্ট গাইড লাইন প্রণয়ন করে প্রতিটি হাসপাতালে পাঠাতে হবে। গাইড লাইন পরিপালন না করলে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার মতো পদক্ষেপও নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে রিজেন্ট হাসপাতালের ক্ষেত্রে তা- করা হয়েছে। তবে সেটি অনেক দেরিতে হয়েছে। আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই, দ্রুতই কভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো উন্নত করার মাধ্যমে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আর কাজটি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই সক্রিয় হতে হবে। নাজুক ব্যবস্থাপনার কারণে করোনার প্রাদুর্ভাবও বেড়ে উঠছে। কারণে রোগী চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে তদারকি জোরদারের বিকল্প নেই। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বেসরকারি হাসাপাতালগুলোকে কভিড চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর কিছু হাসপাতালকে নির্দেশনা দিয়েছে। তারা যদি না মেনে থাকে, তবে তা বন্ধ করে দেয়ার অধিকারও রাখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বন্ধ এক্ষেত্রে সমাধান নয়, কারণ এতে হয়তো বড়সংখ্যক হাসপাতালই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ঘন ঘন হাসপাতাল পরিদর্শন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণে তাগাদা দেয়া উচিত। প্রয়োজনে সরকারের ডেডিকেটেড লোকও নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা থেকে বলা যায়, সামনের দিনগুলোয় আরো বেশিসংখ্যক হাসপাতালকে কাজে যুক্ত করতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা উন্নত করার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন