নভেল করোনাভাইরাস এবং অর্থনৈতিক অবস্থা

এবিএম আবছার হামিদ

আজ বিশ্বব্যাপী এক আলোচনার বিষয় হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস। এটি অতি ক্ষুদ্র একটি অণুজীব। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এই অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসকে দেখা অসম্ভব। এই অতি ক্ষুদ্র অণুজীবের কাছে বন্দি আজ পুরো বিশ্ব। নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনের উহান প্রদেশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নভেল করোনাভাইরাসকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে এবং আক্রান্তের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব রয়েছে অর্থনীতিতে। বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে অনেক জিনিসই আমদানি করা হয় চীন থেকে। নভেল করোনাভাইরাস চীনে শনাক্ত হওয়ার পর চীনের সঙ্গে অন্যান্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, যার প্রভাব দেখা যায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে। তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে জনসমাগম এড়ানোর জন্য সরকার ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। জনগণকে জনসমাগম এড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাসা থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করার জন্য বলেছে। কিন্তু আমাদের দেশের সব প্রতিষ্ঠানের জন্য তা সম্ভব নয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নভেল করোনাভাইরাসের ফলে রফতানি বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো না পারছে রফতানি করতে, না পারছে দেশে জোগান দিতে। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে তাদের সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যারা এই রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আয়-উপার্জন করতেন, তাদের আয় এখন বন্ধ পরিস্থিতির জন্য। গ্রামের দোকানগুলোয় প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান দিতে জোগানদাতারা হিমশিম খাচ্ছেন। আমরা যদি চিন্তা করি আমাদের বিমান পর্যটন শিল্পগুলোর কথা, তাহলে দেখতে পাই অবস্থায় এই শিল্পগুলোর আয় শূন্যের কোটায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে যারা দিন আনে দিন খায়, সেই শ্রমজীবী মানুষ। তাদের আয়-উপার্জন নেই। ক্ষুদ্র মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো এক বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিদেশী ক্রেতা তাদের অর্ডার বাতিল করেছে। অনেক অর্ডারের কাজ শেষ হওয়ার পথে এবং অনেকগুলো শেষ হয়ে শুধু পাঠানো বাকি। অর্ডারগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক এক ভিডিওবার্তায় তাদের অনুরোধ করেছেন, যেগুলো পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেছে সেগুলো যেন বাতিল না করা হয়। অন্য দেশগুলো যদি আমাদের পোশাক খাতের পণ্য না নেয় তাহলে এর মালিকরা তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাবেন। তাদেরকে হয়তো কর্মী ছাঁটাই করতে হতে পারে। তা করলে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এমনকি পোশাক খাতের অনেক মালিক ব্যর্থ হতে পারেন ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে হোটেল, রেস্তোরাঁগুলো। ফলে তাদেরও আয় বর্তমানে নেই। আয় বন্ধ হয়ে গেছে সেসব মানুষের, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কোনো এলাকায় চায়ের দোকান অথবা কোনো ছোট দোকান পরিচালনার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছিলেন, সেসব প্রবাসীর আয়-উপার্জন কমে গেছে এবং তাদেরকে ছাঁটাই করার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশের পোশাক খাতের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। ফলে তাদের আয় যদি বন্ধ হয় তাহলে তা অনেক পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে। আমদানি-রফতানি বন্ধ হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে বন্দরগুলোয়ও। এই মহামারী অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব ফেলছে কৃষকদের ওপরও। এই মহামারীর জন্য তারা মাঠে শ্রম দিতে পারবেন না এবং কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারবেন না। মহামারীর জন্য আয় কমে গেছে পরিবহন শ্রমিরদেরও। অনেক কিছুরই পরিবর্তন হবে মহামারীতে। আমাদের দেশের মানুষ এটিএম কার্ড ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। কিন্তু এখন হয়তো এটিএম কার্ডের ব্যবহার বৃদ্ধি হতে পারে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে। কর ভ্যাট আদায় বছর কম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ এখন মহামারীর জন্য অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এই মহামারীর ফলে যে ক্ষতি হবে তা মেনে নিয়ে এর পরিমাণ কীভাবে কমানো যায়, সে ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ছাত্র সংগঠন ত্রাণ নিয়ে মানুষের দরজায় যাচ্ছে। তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করতে হবে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আমাদের সবারই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যারা জাকাত প্রদান করেন, তারা এদিক বিবেচনায় রাখতে পারেন। যারা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন, সেসব কৃষক পোশাক খাতের শ্রমিককে প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। যেখানে সম্ভব সেখানে ভ্যাট কর হ্রাস কিংবা মওকুফ করা যেতে পারে। কৃষকদের সহজভাবে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। নীতিনির্ধারকদের ক্ষতি হ্রাস করার জন্য বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

লেখক: শিক্ষার্থী, বিবিএ (হিসাববিজ্ঞান), আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস আডমিনিস্ট্রেশন, সিলেট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন