পায়রা বন্দর উন্নয়নে ৯ প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত

৪ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতায় উন্নয়নকাজ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পায়রা সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে নয়টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিবন্ধকতার ফলে বিলম্ব হতে পারে বন্দর উন্নয়নের কাজ। একই সঙ্গে বন্দর ঘিরে যেসব মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নেও অন্তরায় হতে পারে এসব প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া চার মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে উন্নয়নকাজ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পায়রা বন্দরের প্রতিবন্ধকতাগুলো হলো বন্দরের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পুনর্বাসনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা, মাঠ পর্যায়ে দক্ষ জনবল পদায়ন, বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও কয়লা টার্মিনাল নির্মাণ, বন্দরের সড়ক যোগাযোগ, কাস্টমস সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বন্দরের রেল যোগাযোগ, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও বিমানবন্দর নির্মাণ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য সৃষ্ট ২৬৬টি পদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৯২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ১৭ ক্যাটাগরির ৪৪টি পদের ছাড়পত্র মিলেছে, এসব পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আরো ১৮ ক্যাটাগরির ৭১টি পদ সৃষ্টি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৩ হাজার ৩৫০ দশমিক ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫-এর জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটির আওতায় এডিপি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, ওয়্যারহাউজ ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ নৌরুটে ড্রেজিং, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ এবং বন্দরের ডিটেইলড মাস্টারপ্ল্যান ও ডকুমেন্টস প্রণয়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ৫৬২ দশমিক ২৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৪ দশমিক ৯৭ একর।

পায়রা বন্দর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য বলছে, প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৬১ শতাংশ। তবে পিছিয়ে আছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন কার্যক্রম, যার বাস্তব অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ। বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। এ পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৪২ শতাংশ। প্রকল্পটির মেয়াদ ছয় মাস বাকি থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তবে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ অর্থ জেলা প্রশাসকের কাছে দিয়ে রাখায় প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি বাস্তব অগ্রগতির তুলনায় কিছুটা ভালো। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, আর্থিক অগ্রগতি ৬২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩ হাজার ৯৮২ দশমিক ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির এখন পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পিপিপি বা জিটুজি অর্থায়নে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এগুলো হলো পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং শীর্ষক ৮ হাজার ২৯৭ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প, ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কোল টার্মিনাল নির্মাণের কাজ ও পায়রা বন্দরের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তবে এসব প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, পায়রা বন্দর বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে বাস্তবায়নাধীন ১০টিফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সরকার পায়রা বন্দরের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে পায়রা সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন