বারি ফিরিঙ্গি-১

ঔষধি গুণসম্পন্ন অপ্রচলিত মসলা

সম্প্রতি বারি ফিরিঙ্গি- নামে একটি উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেছেন মাসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। জাতটির বীজ বাংলাদেশ থেকে প্রবর্তিত এবং মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার গবেষণা মাঠে জার্মপ্লাজমটি যাচাই করা হয়। পরবর্তী সময়ে লালমনিরহাট, মাগুরা, ফরিদপুর জয়দেবপুর মসলা গবেষণার বিভিন্ন আঞ্চলিক উপকেন্দ্রে পরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়

দৈনন্দিন জীবনে রান্নায় মসলার ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলার ব্যবহার হয়। এর মধ্যে আমাদের দেশে চাষ হয় মাত্র ১৭টি মসলা। এসব মসলার মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া প্রধান মসলা হিসেবে ব্যবহূত হলেও এসবের বাইরে রয়েছে অনেক অপ্রচলিত মসলার ব্যবহার। ফিরিঙ্গি এমনি একটি অপ্রচলিত মসলা। যার রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। বাংলাদেশে এর ব্যবহার কম হলেও মসলাটি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ বরেন্দ্র চর এলাকায়। ব্যাপকভাবে মসলাটির চাষ হলে বিদেশে রফতানিসহ অর্থনৈতিক চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


দেশে মসলা নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র। কেন্দ্রটি থেকে পর্যন্ত ২০টি মসলার প্রায় ৪৫টি জাত অবমুক্তি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রসংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি বারি ফিরিঙ্গি- নামে একটি উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেছেন কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। জাতটির বীজ বাংলাদেশ থেকে প্রবর্তিত এবং মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার গবেষণা মাঠে জার্মপ্লাজমটি যাচাই করা হয়। পরবর্তী সময়ে লালমনিরহাট, মাগুরা, ফরিদপুর জয়দেবপুর মসলা গবেষণার বিভিন্ন আঞ্চলিক উপকেন্দ্রে পরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়।

ফিরিঙ্গি মসলাটি পুষ্টিগুণের পাশাপাশি নানা ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ, যা সারা বিশ্বে সর্বজনবিদিত। মসলা গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ফিরিঙ্গি (TrigonellacorniculataL.) Fabaceae গোত্রের একটি অপ্রধান মসলা ফসল। বাংলাদেশে এটি ফিরিঙ্গি নামে পরিচিত হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। ফিরিঙ্গি ফসলটি অনেকটা মেথি ফসলের মতো। কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য, যেমন গাছের বৃদ্ধি পডের (ফলের) আকৃতির কারণে প্রজাতি দুটোতে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এর পডের আকৃতি অপেক্ষাকৃত ছোট এবং Sickle আকৃতি হওয়ায় ইংরেজিতে এটি Sickle shaped fenugreek/ Sickle fruit fenugreek নামে পরিচিত।

ফিরিঙ্গি গাছের পাতা ফল মেথির মতোই ব্যবহূত হয়। তবে আমাদের দেশে এর পডসহ বীজ পাঁচফোড়নের মসলা হিসেবে ব্যবহূত হয়। ভারতের এটিকাচুরি মেথিনামে পরিচিত এবং এর পাতা শুকিয়ে বাজারজাতের জন্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। ফিরিঙ্গি বীজ নানা প্রকার তরকারি, আচার, চাটনি ইত্যাদি স্বাদ সুগন্ধ বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। ফিরিঙ্গির যথেষ্ট ঔষধি মূল্য রয়েছে। বহুমূত্র রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমশক্তি রুচি বাড়ায়। বাংলাদেশে ফসলটি এখনো বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হয় না। অল্প পরিসরে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য ফিরিঙ্গি চাষ করা হয়ে থাকে। তবে দেশের আবহাওয়া মাটি অনুকূল থাকায় মসলাটি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।


জাতের গাছের উচ্চতা ২২-৩৫ সেন্টিমিটার। প্রাথমিক শাখার সংখ্যা পাঁচ-ছয়টি। প্রতি গাছে পডের (ফল) সংখ্যা ৩৬০-৪৬০। প্রতিটি পডে -১০টি বীজ থাকে। বীজগুলো শুষ্ক হলুদাভ বাদামি বর্ণের। জাতে রোগবালাই নেই বললেই চলে। প্রতি এক হাজার বীজের ওজন দশমিক থেকে দশমিক গ্রাম। জাতটির জীবৎকাল ৯০-১০০ দিন। প্রতি হেক্টরে পডের দশমিক থেকে দশমিক টন বীজের ফলন শূন্য দশমিক থেকে শূন্য দশমিক টন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার বিভিন্ন কেন্দ্র উপকেন্দ্র হতে উচ্চফলনশীল জাতটির বীজ কৃষকের মাঠে সমপ্রসারণের জন্য সরবরাহ করা হবে। উচ্চফলনশীল, অপেক্ষাকৃত কম রোগ পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব এবং পানির চাহিদা কম থাকায় জাতটি বরেন্দ্র চর এলাকাসহ সারা দেশে চাষ করা সম্ভব।

বিষয়ে মসলা গবেষণা কেন্দ্র বগুড়ার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা . মো. হামিম রেজা বলেন, মসলার ব্যাপক মেডিসিন্যাল ভ্যালু বা ঔষধি গুণ রয়েছে। বিশেষ করে হজমে লিভারের জন্য এটি বেশ উপকারী। কালিজিরা, মেথি, মৌরি ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ জানলেও ফিরিঙ্গির পরিচিতি না থাকা ব্যাপকভাবে চাষ না হওয়ার কারণে মানুষ এটি সম্পর্কে জানে না। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তরিতরকারিতে এর ব্যবহার রয়েছে। সব ধরনের মাটিতে এর চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। বগুড়া, শরীয়তপুর, ফরিদপুরসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় সীমিত পর্যায়ে এর চাষ হয়ে থাকে।

কর্মকর্তা আরো জানান, বিভিন্ন ধরনের মাইনর স্পাইস ক্রপ ডেভেলপ (গৌণ মসলার) করার জন্য সরকারের একটি প্রজেক্ট রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ঔষধি গুণসম্পন্ন ধরনের মসলাজাতীয় ফসল নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা দেশের মানুষের কাছে এসবের পরিচিতি তুলে ধরার, যাতে এসবের গুণাগুণ মানুষ ব্যবহার করতে পারে।

 

uহাজিনুর রহমান শাহীন, গাজীপুর

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন