দেশীয় পরিবেশ এবং গ্রাহকদের চাহিদার সঙ্গে মানানসই করে আমাদের পণ্যগুলো ডিজাইন করি

ছবি : বণিক বার্তা

আসছে ঈদুল ফিতর। এ উপলক্ষে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের চাহিদা বাড়বে ক্রেতাদের। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, এলইডি টিভি, ব্লেন্ডারসহ নানা ধরনের পণ্য। হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের বাজারে অন্যতম নাম ইলেক্ট্রো মার্ট। চাহিদা, ক্রেতাদের পছন্দ, কোম্পানির প্রদানকৃত সুযোগ-সুবিধাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. নুরুল আফছার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরফিন শরিয়ত

বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ চেইনে প্রতিবন্ধকতার মতো ঘটনা দেখা যাচ্ছে। ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে এসবের প্রভাব পড়েছে কি?

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলি হামলা এসব ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন অনেকটা বাধাগ্রস্ত। এসব কারণে ইলেকট্রনিক পণ্যের কাঁচামাল, খুচরা যন্ত্রাংশ ও সরবরাহ প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ঊর্ধ্বমুখী, জাহাজ ভাড়া ও ডলারের দাম সমন্বয়ের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা সমন্বয় করতে হয়েছে। ফলে গ্রাহক ও ক্রেতার চাহিদায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে।

ক্রেতার সংখ্যা কেমন কমছে?

সেভাবে প্রভাব পড়েনি। আগে পণ্য ক্রয় করতে এলে ক্রেতা কিনে ফেলতেন, এখন কিনতে এসে তারা সময় নিচ্ছেন, ভেবেচিন্তে দেখছেন। কম দামের মধ্যে ভালো পণ্য খোঁজার চেষ্টা করছেন তারা। এখন ইলেকট্রনিকস পণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মতো হয়ে গেছে। যারা কর্মজীবী, রাতে তারা ভালো ঘুমাতে না পারলে দিনে ভালো সেবা দিতে পারবেন না। যার জন্য এসির প্রয়োজন। ব্যস্ততার কারণে মানুষ ফ্রিজ কিনে রাখছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটি পণ্য কেনার আগে খুব চিন্তাভাবনা করে কিনছেন।  

ডলারের দাম বৃদ্ধিতে কাঁচামাল আমদানিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন কীভাবে?

ডলারের দাম সমন্বয়ের কারণে দেশের ইলেকট্রনিকস খাতে কাঁচামাল ও অন্যান্য খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে সঙ্গে ব্যাংকগুলো এলসি প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় যথাসময়ে কাঁচামাল নিশ্চিত করে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বারবার বিঘ্ন হচ্ছে। তবে বাজার চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হচ্ছে। 

গত এক দশকে দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারের আকার বেশ বড় হয়েছে। বর্তমানে এ বাজারের কী অবস্থা?

বিগত কয়েক বছর এ খাতকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে শুল্ক, কর, ভ্যাট অব্যাহতিসহ নানা সুবিধা দিয়ে আসছে। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শত ভাগ বিদ্যুতায়িত হওয়ায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারটা অনেক বেশি বিকশিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ খাতকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সরকার এসব সুযোগ-সুবিধা দীর্ঘমেয়াদি করবে। আমরা আশা করব ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এ সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তাহলে আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করতে পারব। এর মাধ্যমে রফতানির একটি খাত সৃষ্টি হবে।

ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারের আকার কেমন?

বর্তমানে ইলেকট্রনিক মার্কেটের আকার ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। আগামী ৮-১০ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

বর্তমানে এ খাতে রফতানি করা কতটুকু সম্ভব বলে মনে করছেন?

দেশের জনশক্তি আমাদের জন্য অনেক সুবিধা দেবে। চীনের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন প্রতিদিনই শ্রম খরচ বাড়ছে। পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক কারণে আমাদের কাছ থেকে পণ্য নিতে চাচ্ছে। সে ‍সুযোগটা আমরা নিতে পারলে আমাদের এখান থেকে রফতানি করা সম্ভব হবে। 

ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার বিকাশে সরকার কী কী নীতি সহায়তা দিচ্ছে?

সরকার এক দশকের অধিক সময় ধরে নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি আছে, ভ্যাট-ট্যাক্সের এই সুবিধাকে দীর্ঘায়িত করতে হবে। তাহলে ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার আরো বেশি বিকশিত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বিভাগকে আরো বেশি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ এবং নীতি প্রণয়নের অনুরোধ থাকবে। আমরা মনে করি যেকোনো বিনিয়োগ নীতি নতুন আসলে তা যেন দীর্ঘমেয়াদি হয়। স্বল্পমেয়াদি নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ থাকে কখন এটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। এতে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে অনেক বেশি সময় নেন। এতে করে খাতগুলোয় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আসে না। স্বল্পমেয়াদি নীতিসহায়তা খুব বেশি ফলপ্রসূ হয় না। কোনো শিল্পকারখানা করা হলে সেখান থেকে ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে কমপক্ষে ১০-১৫ বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগের এক বছর পর নতুন নিয়ম এলে বা নীতি পরিবর্তিত হলে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়েন এবং তাদের বিনিয়োগ বোঝা হয়ে ওঠে। সেজন্য সহজে কেউ বিনিয়োগ করতে চান না। 

গত বছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদায় বিরাট উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল। গত বছরের চাহিদার ভিত্তিতে এ বছর পরিস্থিতি কেমন হতে পারে বলে মনে করছেন? 

গত বছর চাহিদা ছিল অল্প সময়ের জন্য। হঠাৎ করে অনেক বেশি গরম পড়ায় সবাই মনে করেছিল চাহিদা অনেক বেশি থাকবে। কিন্তু তা আবার কমে যায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর চাহিদা অনেক বেশি থাকবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার কারণে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এসির প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। 

এসির কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? 

আমরা গ্রি এসি পরিবেশন করি। এই এসি পরিবেশবান্ধব। পরিবেশবান্ধব ও জিরো কার্বন নিঃসরণে বৈশ্বিকভাবে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। একই সঙ্গে গ্রি এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীও। আমরা নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছি। দীর্ঘসময় এসির মধ্যে থাকার কারণে অনেকের স্কিন শুষ্ক হয়ে যায়। এ পরিস্থিতি প্রতিরোধে আমাদের ডিহিউমেডিফিকেশন অপশন আছে। আমাদের প্রতিটি এসির মধ্যে ফিল্টার দেয়া আছে। এ ফিল্টারের কারণে বাতাস দূষিত হয় না, ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস দূর করে। অনেকে অ্যাজমাজনিত কারণে এসি ব্যবহার করতে পারে না। এর জন্য আমাদের মাল্টি-ফাংকশন ফিচার আছে। রুমটা যাতে পরিবেশবান্ধব এবং আরামদায়ক থাকে সেভাবেই আমাদের গ্রি এসি তৈরি করা হয়। এসিতে আমরা যে গ্যাস ব্যবহার করি এটি অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। আমাদের ফ্রিজসহ অন্যান্য পণ্যও পরিবেশবান্ধব এবং বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। আমরা এমনভাবে পণ্যগুলোর ডিজাইন করেছি যেগুলো দেশের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই হয়।

ইলেক্ট্রোমার্টের গবেষণা এবং উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়?

আমাদের গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের পণ্যের আধুনিকায়ন করছি। আর এ আধুনিকায়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে আরঅ্যান্ডডি। আমরা কীভাবে আরো নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসা ও দেশের প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করতে পারি তার জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের দেশে ইঁদুর আছে, যেটা অন্যান্য দেশে নেই। ফলে ইঁদুরের বিষয়টি চিন্তায় রেখে আমরা ফ্রিজের ডিজাইন করি। এভাবেই আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করি। 

সামনে ঈদুল ফিতর। এ উৎসবে কোন কোন ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা বাড়ে?

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশে ছোট ছোট হোম অ্যাপ্লায়েন্সের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে আমাদের রয়েছে বিশ্বের সেরা কনকা ব্র্যান্ডের এলইডি টিভি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, সিলিং ফ্যান, ওয়াটার ডিসপেনসার, মিক্সার গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক ক্যাটল, গ্যাস স্টোভ, ইনফ্রেইড কুকার, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ইলেকট্রিক আয়রন ইত্যাদি। এবার যেহেতু গরম পড়ছে, আমরা আশা করছি এসিও এবার বেশি বিক্রি হবে।

ঈদ উপলক্ষে আপনাদের গ্রাহকের জন্য ছাড় বা অফার রাখছেন কিনা?

আমাদের রেগুলার একটি অফার চলছে যেখানে একজন ক্রেতা যদি কর্মজীবী হয় অথবা স্টুডেন্ট হন সেক্ষেত্রে তার আইডি কার্ড শো করে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পেতে পারেন। এছাড়া আমরা ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে স্ক্র্যাচ কার্ড অফার করছি। এই অফারে একজন কাস্টমার ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ ডিসকাউন্ট পেতে পারেন। এছাড়া পণ্য কেনার ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫টি ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসহ নগদ এবং মাসিক ৩-১৮ মাসের কিস্তিতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের শো-রুম, ডিসপ্লে সেন্টার ও ডিলারদের মাধ্যমে ক্রয় করা যায়। আমাদের নিজেদেরও একটা কিস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের কাছ থেকে নিলে ১২ মাস পর্যন্ত কিস্তি সুবিধা দিয়ে থাকি। 

গ্রাহকের উদ্দেশে কিছু বলবেন কিনা?

গ্রাহকদের আমরা বলব যেকোনো ইলেকট্রনিক পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ক্রয়ে বিশেষ বিবেচনা করতে হবে। এতে একদিকে যেমন নিজেদের অর্থ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক হবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন