২০২৪ সাল আমাদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জিং বছর হতে যাচ্ছে

ছবি : বণিক বার্তা

২০২৩ সালটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কেমন ছিল?

গত বছর দেশের অর্থনীতি, আর্থিক খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং একটি বছর ছিল। এর অনেক কারণও রয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে এর আগের বছরের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে, যা দুঃখজনক। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। পাশাপাশি মুনাফায় প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল। হয়তো এককভাবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ভালো হয়েছে কিন্তু সার্বিকভাবে এ খাতের মুনাফা সংকুচিত হয়েছে। আমার প্রতিষ্ঠানের কথা যদি বলি, ২০২৩ সালে অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের ৩০ শতাংশ আমানত বেড়েছে, সম্পদ ও বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ এবং মুনাফা ৪ শতাংশের মতো বেড়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমরা রয়েছি, এর মধ্যে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি একটি। টাকার অবমূল্যায়নও আমাদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। অবমূল্যায়নের কারণে রফতানির ক্ষেত্রে আমরা লাভবান হয়েছি কিন্তু আমাদের আমদানিনির্ভরতা বেশি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আমার আরো বেশকিছু ব্যবসা রয়েছে যেমন স্টিল ফ্যাব্রিকেশন যেটি পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। স্টিল প্লেট, নাট, বোল্টের মতো জিনিসগুলো আমাকে আমদানি করতে হয় এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এগুলো ব্যয়বহুল হয়ে গেছে। আমরা লুব্রিকেটিং অয়েল উৎপাদন করি। এজন্য বেজ অয়েল এনে সেটি ব্লেন্ড করে লুব্রিকেটিং অয়েল, ব্রেক অয়েল তৈরি করি। অয়েলের দাম হয়তো বাড়েনি কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। একটি বিষয় বলতে হয়, সরকারিভাবে ডলারের দর ১১০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে, অন্য ব্যবসায়ীদের কথা জানি না আমি কিন্তু এ দামে ডলার পাচ্ছি না। আমাকে ১২০ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হয়েছে। এমনকি আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের কেউ কেউ ১২৫ টাকা পর্যন্ত ডলার কিনে এলসি খুলতে বাধ্য হয়েছেন। এসব চ্যালেঞ্জের কথা বিবেচনায় নিলে অবশ্যই ২০২৩ সাল আমাদের জন্য একটি খারাপ সময় গেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে আমানত। এক্ষেত্রে আমানত সংগ্রহে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয়েছে কি?

চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই ছিল। বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের মধ্যে একটি আস্থার সংকট রয়ে গেছে। মূলত পিপলস লিজিংয়ের ঘটনার পর থেকেই এ আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে। আমানত সংগ্রহে আমাদের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হয়। তখন আমাদের কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমি গত বছর প্রণয়ন করা ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের কথা বলতে চাই। অবশ্যই এর প্রয়োজন ছিল, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আইনটি প্রণয়নের সময় আমরা যারা অংশীজন ছিলাম তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এমনকি আইনের খসড়ার ওপর আমরা যেসব মতামত দিয়েছিলাম সেগুলোও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। এতে এমন কিছু সিদ্ধান্ত বা নীতি আনা হয়েছে যেটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো হয়নি। যেমন আইনে বলা হয়েছে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান একক কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি আমানত নিতে পারবে না। এটি খুবই কঠোর একটি সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবসম্মত নয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের ২৭ শতাংশই হচ্ছে ৫০ লাখ টাকার বেশি। এখন এসব আমানত যখন নবায়নের সময় আসবে তখন আমরা যদি গ্রাহককে বলি যে আপনার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি আমানত আমরা রাখতে পারব না, তাহলে আমাদের প্রতি তার আস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তখন তো সেই গ্রাহক আমাদের কাছে থাকা পুরো আমানতই ফেরত নিয়ে যাবেন। এ বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি আমাদের সমস্যা অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে আমরা মনে করি। 

কিন্তু আইনে আমানতের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আপনাদের আশ্বাসও দেয়া হয়েছে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে কিংবা তারল্য সংকটে পড়বে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না।

আমরাও এটি বিশ্বাস করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ক্ষমতার প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুকূল নীতি গ্রহণ করবে। আরেকটি বিষয় আমি এখানে তুলে ধরতে চাই যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয়ে থাকে আর্থিক খাতের লেন্ডার অব লাস্ট রিসোর্ট বা ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল। কিছুদিন আগে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানতের ওপর চাপ তৈরি হয়েছিল। সে সময় ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। এখানেই আমার প্রশ্ন যে পিপলস লিজিংয়ের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ভূমিকা কোথায় ছিল? তখন কেন প্রতিষ্ঠানটিকে অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল? সে সময় প্রতিষ্ঠানটির দায় পরিশোধে কত টাকাই বা লাগত এক-দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি না? বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণেই মানুষ ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা রাখে। ব্যাংকের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে অথচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ টাকাও দেয়া হয়নি। এ ধরনের দ্বিমুখী নীতি কেন? এখনো অনেক আমানতকারী অর্থ না পেয়ে কষ্টে আছেন। সে সময় যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সহায়তা পেতাম তাহলে আমাদের এই দুঃখটা থাকত না যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু ব্যাংকের জন্য ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আপনাদের ভূমিকা কী হবে?

বছরখানেক হলো আমরা বিএএফসি প্রতিষ্ঠা করেছি এবং গত ছয় মাস ধরে আমরা সক্রিয় রয়েছি। আমরা নিয়মিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিজেরা আলোচনা করছি। কারো কোনো সমস্যা থাকলে সেটি সমাধানের চেষ্টা করছি, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছি। যারা একটু সমস্যার মধ্যে আছে তাদেরক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছি। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় সবার সঙ্গে বৈঠক করেছি। কয়েক বছর আগে আমরা তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সে সময় তিনি আমাদের বলেছিলেন পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের সিদ্ধান্তটি ভালো ছিল না। তিনি আরো বলেছিলেন যে আর কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করা হবে না। আমরা তখন তাকে অনুরোধ করেছিলাম যে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি ঘোষণা যাতে পাবলিকলি দেয়া হয়। এতে করে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। নতুন যে অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন তার সঙ্গে আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে খুব শিগগিরই দেখা করে একই অনুরোধ করব। মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরির ক্ষেত্রে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যদি দেখে যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করার জন্য সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেছনে আছে তাহলে কোনো সমস্যা হলেও তারা সহজে শঙ্কিত হন না। পাশাপাশি আমরা এনবিএফআই খাতের ইমেজ বাড়ানোর জন্য গোলটেবিল বৈঠক ও সেমিনারের মতো অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।

এখনো বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাননি। এতে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে আপনারা কোনো উদ্যোগ নেবেন কি?

আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি তহবিল গঠনের। অবশ্যই সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে হতে হবে। এ তহবিল থেকে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ সবার আগে ফেরত দেয়া যেতে পারে। আর যাদের আমানতের পরিমাণ বেশি তাদের  ইকুইটি দেয়ার প্রস্তাব করা যেতে পারে। আমাদের দেশে অতীতে এ ধরনের নজির রয়েছে। যেমন ইস্টার্ন ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ব্যাংকটির কিছু তহবিল ছিল যেটা থেকে ছোট আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হয়েছিল। আর বড় আমানতকারীদের ব্যাংকের শেয়ার দেয়া হয়েছিল। সে সময় যারা ব্যাংকটির শেয়ার পেয়েছিলেন আজ তারা কত লাভবান হয়েছেন সেটি চিন্তা করা যায়? সবকিছুই সম্ভব যদি ইচ্ছা থাকে এবং প্রত্যয় থাকে। অবশ্যই এ ধরনের কিছু করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তার প্রয়োজন হবে। তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান সমস্যার মধ্যে পড়েছে তাদের সবারই কিছু না কিছু সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদ বিক্রি করেও আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া যায়।

বিএলএফসিএর পক্ষ থেকে তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নতুন যারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তাদের সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনিয়োগের মাধ্যমে সেগুলোর অবস্থা পরিবর্তনসংক্রান্ত একটি মডেল প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেটি কি এখনো বাস্তবায়নযোগ্য?

অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য, কেন নয়? এটি ভালো একটি প্রস্তাব। আমি একটু আগেই ইস্টার্ন ব্যাংকের উদাহরণ দিয়েছি। বাংলাদেশের ব্যাংকের কাছে অনেক প্রস্তাব আসবে এনবিএফআইয়ের লাইসেন্সের জন্য। তাদেরকে বলা যায় যে একটি সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার জন্য। এসব প্রতিষ্ঠানের তো কিছু সম্পদও আছে। তাছাড়া ভালো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের উদ্যোগও নেয়া যায়। নিজের প্রতিষ্ঠানের কথা যদি বলি আমরা এ ধরনের সমস্যাগ্রস্ত একটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে রাজি আছি। আমার পর্ষদে যারা আছে তাদেরকে রাজি করিয়ে আমি সহজেই ইকুইটি জোগাড় করতে পারব। কাজেই সব ধরনের সুযোগই রয়েছে।

বিশ্বের অনেক দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ ব্যাংক হিসেবে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিকিউরিটাইজেশনের মাধ্যমে বড় আকারের অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমাদের দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে কি এ ধরনের ভূমিকা রাখা সম্ভব?

এটা ঠিক, আমাদের পাশের অনেক দেশ এমনকি শ্রীলংকায়ও এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমাদের হয়তো ম্যাচিউরিটি আছে কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা এখনো হয়নি। হয়তো আমাদের অর্থনীতি এজন্য প্রস্তুত আছে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে খাত হিসেবে আমরা প্রস্তুত নই। তবে আমরা অন্যভাবে পণ্যে বৈচিত্র্য আনছি। উদাহরণস্বরূপ আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ন্যানো লোনের অনুমোদন পেয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা ৫০ হাজার টাকার বেশি ঋণ দিতে পারব না। কিন্তু এটি পুরোপুরি ডিজিটাল হতে হবে এবং আমরা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের (এমএফএস) সঙ্গে নিয়ে এটি বাস্তবায়ন করব।

অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের পুঁজিবাজারে আসার কথা ছিল। এ বিষয়ে অগ্রগতি কতটুকু?

প্রকৃত পক্ষে আরো দুই বছর আগেই আমাদের পুঁজিবাজারে আসার কথা ছিল। কিন্তু মাঝে কভিড-১৯ ও পুঁজিবাজার পরিস্থিতির কারণে সেটি পিছিয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে তালিকাভুক্তির জন্য বাড়তি সময় নিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পুঁজিবাজারে ব্যাংকের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ক্ষেত্রে আন্ডার সাবস্ক্রিপশনের মতো ঘটনা দেখা গেছে। এ নিয়ে আমাদের শ্রীলংকান বিনিয়োগকারীরা কিছুটা চিন্তিত। আমরা তাদের রাজি করিয়ে পুঁজিবাজারে অবশ্যই আসব এবং আমরা পুঁজিবাজারে ফেসভ্যালুতেই আসতে চাই। এ বছরের মধ্যেই আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা আছে।

সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ বছরটি কেমন যাবে বলে মনে করছেন?

প্রকৃতিগতভাবে আমি আশাবাদী মানুষ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বেশকিছু কারণে আমি সেভাবে আশাবাদী হতে পারছি না। সামষ্টিক অর্থনীতির দিকে যদি তাকাই এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়ে গেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে খুব একটা বাড়ছে তা নয়, শুধু ধরে রাখছি। টাকার ওপর আরো অবমূল্যায়নের চাপ রয়েছে। মুদ্রানীতিতে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। সামনের দিনগুলোয় ঋণ নেয়া আরো ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। বাণিজ্যক ব্যাংক থেকে সরকার বড় অংকের অর্থ ধার করছে। সম্প্রতি ভর্তুকির অর্থের বিপরীতে বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। আশা করছি আমাদের রেমিট্যান্স ও রফতানি বাড়বে। সরকার মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে। যদি আমাদের রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়ে তাহলে সেটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব রাখবে। পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকলে টাকার অবমূল্যায়নের চাপ কমে যাবে, ডলার সংকট কমে যাবে। যদি সামষ্টিক অর্থনীতির সব ফ্যাক্টর সঠিক পথে থাকে, তাহলে আমরা চ্যালেঞ্জগুলো ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারব। আমি আশাবাদী হতে চাই কিন্তু একই সঙ্গে বাস্তব অবস্থা চিন্তা করলে ২০২৪ সাল আমাদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জিং বছর হতে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন