টেরিটাওয়েল: যুক্তরাষ্ট্রের কোটায় শুরু এখন দেড় বিলিয়নের বাজার

নেছার উদ্দিন

দেশের টেরিটাওয়েল পণ্য রফতানির শুরুটা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া কোটার মাধ্যমে। আশির দশকে মাঝামাঝিতে টেরিটাওয়েল পণ্য রফতানির জন্য কোটা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কোনো ধরনের অবকাঠামো, কারখানা না থাকায় সে কোটা পূরণ অনেকটা কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য। এ সময় চাহিদা পূরণ করতে এ অঞ্চলের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলোয় (ইপিজেড) গড়ে উঠতে থাকে টেরিটাওয়েল কারখানা। এসব কারখানার মাধ্যমে এ টেরিটাওয়েল রফতানির যাত্রা শুরু। চার দশকের ব্যবধানে এখন টেরিটাওয়েল খাত দাঁড়িয়েছে দেড় বিলিয়ন ডলারের বাজারে।

টেরিটাওয়েলসংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েলের নিজস্ব চাহিদা মেটাতে কুষ্টিয়ায় কিছু টেরিটাওয়েল উৎপাদনের কারখানা চালু হয়েছিল। তখন টেরিটাওয়েলের চাহিদাও যেমন খুব বেশি ছিল না, একই সঙ্গে দেশের বাইরে রফতানির প্রবণতাও গড়ে ওঠেনি। আশির দশকে মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় রফতানি শুরু করে বাংলাদেশ। সে সময়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তান টেরিটাওয়েল রফতানির সঙ্গে অনেক বেশি সংশ্লিষ্ট ছিল। এসব টেরিটাওয়েল পণ্যের বড় গন্তব্য বাজার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের টেরিটাওয়েল রফতানিতে কোটা ব্যবস্থা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে বেশি পরিমাণ কোটা ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা দেয় দেশটি। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে টেরিটাওয়েল খাতের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেয় বাংলাদেশ।

রফতানিকারকরা জানান, দেশে বর্তমানে শপ, বাথ, গলফ, বিচ, গ্লাস, টি-টাওয়েল, ফ্লোর ম্যাট, হজ এহরাম, ন্যাপকিনসহ ৩০-৩৫ ধরনের টেরিটাওয়েল পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্যের বড় বাজার আমেরিকা। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে রফতানি হচ্ছে। এছাড়া দেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নিজেদের ব্যবহারের জন্য বিপুল পরিমাণ টেরিটাওয়েল দেশীয় উৎপাদকদের কাছ থেকে ক্রয় করে।

তখনকার পরিস্থিতি বর্ণনা করে বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান এম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘‌যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে পরিমাণ কোটা দিয়েছিল তা বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব ছিল। বাংলাদেশ করতে পারবে ২ অথবা ৪; বাংলাদেশকে দিয়ে রেখেছে ৪০। দেশে কোনো শিপমেন্ট, অবকাঠামো, কারখানা কিছুই নেই। পাকিস্তান তখন রফতানি করলেও তাদের কোটা দিয়ে রফতানির পরিমাণ ছোট করে দেয়ায় তারা আর কিছু করতে পারছিল না। তখন পাকিস্তানের শিল্পপতিরা রাতারাতি এসে চট্টগ্রামের ইপিজেডে কারখানা দিয়ে দিল। সেখান থেকে বাংলাদেশের টেরিটাওয়েল খাতের যাত্রা। কোটা ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশের টেরিটাওয়েল বিশ্ববাজারে সুনাম অর্জন করে।’

আশির দশকে দেশে একটি উৎপাদন কারখানার মাধ্যমে শুরু হয় টেরিটাওয়েলের মতো হোম টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম। পরবর্তী সময়ে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে বেড়েছে টেরিটাওয়েল উৎপাদন বৃদ্ধি।

বর্তমানে দেশে টেরি কিচেন টাওয়েল, টেরি বাথ টাওয়েল, টেরি বাথ রব, টেরি হুডেড টাওয়েল, ইনস্টিটিউশনাল টেরি টাওয়েলসহ ৩০-৩৫ ধরনের টেরিটাওয়েল পণ্য উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় ১৬০টি হোম টেক্সটাইল কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৬টি কারখানা টেরিটাওয়েল জাতীয় পণ্য উৎপাদন করে। মানুষের শোয়ার ঘরে সবচেয়ে স্বস্তি ও আরামদায়ক সজ্জা বেডিং।

ছয় বছর আগে টেরিটাওয়েলের ব্যবসা শুরু করেন আইয়ুবপুর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী জয়নাল আবেদিন। টেরিটাওয়েল রফতানি কভিড-১৯-এর মধ্যেও ভালোভাবে চলে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে রফতানি বাড়তে থাকে, এখন কিছুটা সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‌বাংলাদেশে টেরিটাওয়েলের বাজারের সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে এ খাত বেশি ভালো করতে পারছে না। পণ্যটি বিলাসবহুল পণ্যের মধ্যে পড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এ পণ্যের ক্রয়াদেশ কমে যায়। যার কারণে এখন আমরা দারুণ দুর্দশার মধ্যে পড়ে গেছি।’ তবে তিনি আশা করেন, আগামী বছর পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আবার ব্যবসা শুরু হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন