রিজার্ভ চুরি

সাক্ষ্য দিতে সিআইডি ও বিএফআইইউর তিন কর্মকর্তা ফিলিপাইনে

নিহাল হাসনাইন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা মামলার তদন্ত কার্যক্রম এখনো শেষ করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দেশী-বিদেশী অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহসহ নানা জটিলতায় তা আটকে আছে প্রায় আট বছর। এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের আদালতে করা মামলায় সাক্ষ্য দিতে গতকাল তদন্তসংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তা সে দেশে গেছেন। এর মধ্যে সিআইডির দুজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের দেয়া সাক্ষ্য কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফিলিপাইন সফরে সিআইডির দুই কর্মকর্তার অংশ নেয়ার বিষয়ে ১৮ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বিএফআইইউ। অনুলিপি দেয়া হয় পুলিশ সদর দপ্তরে। চিঠিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান ফরেনসিক এক্সপার্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন ফাহিম এর আগে ফিলিপাইনের মাকাতি সিটির রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্টে করা পৃথক দুটি মামলায় সাক্ষ্য দেন। ওই মামলা দুটিতে ফিলিপাইনের আদালত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরশেনের (আরসিবিসি) সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতো এবং ব্যাংকটির পাঁচ কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড জরিমানার আদেশ দেন। বিবেচনায় আলোচ্য মামলাগুলোতেও সিআইডির দুই কর্মকর্তার সাক্ষ্যকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খানকে আগামীকাল থেকে ফেব্রুয়ারি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন ফাহিমকে আজ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফিলিপাইনে অবস্থান করতে হবে।

বিএফআইইউর চিঠি পর্যালোচনা করে গত বৃহস্পতিবার সরকারি আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উপসচিব শামীম হাসান স্বাক্ষরিত আদেশে সিআইডির দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্ধারিত সময়ে ফিলিপাইন সফরের অনুমতি দেয়া হয়। পাশাপাশি সফরে অংশ নিয়েছেন বিএফআইইউর যুগ্ম পরিচালক খন্দকার আসিফ রাব্বানী। তারা ফিলিপাইনের মাকাতি সিটি, প্যারানাকিউ সিটি মান্দালুইওং সিটির আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। এটি তাদের দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। বণিক বার্তাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির। তবে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে চাননি কর্মকর্তা। 

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেয়া হয় রিজাল ব্যাংকে। ওই অর্থ পরে স্থানীয় মুদ্রা পেসোয় রূপান্তর হয়ে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোয়। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপাইন সরকার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয়। তার তিন বছর পর ২০১৯ সালে ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলা খারিজের জন্য আবেদন করে আরসিবিসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের এপ্রিলে মামলাটি খারিজ করে দেন নিউইয়র্কের আদালত। রায়ে আদালত জানিয়েছিলেন, মামলাটি বিচারের পর্যাপ্ত এখতিয়ার তাদের নেই।

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিউইয়র্কের এখতিয়ারভুক্ত আদালতে মামলা করা হয় বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া কোটি ১০ লাখের মধ্যে কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারে ওই মামলাটি করা হয়েছিল ২০২০ সালে। রিজাল ব্যাংক ছাড়াও মামলায় সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো ম্যানিলা বে পরিচালনাকারী ব্লুমবেরি রিসোর্ট কর্পসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন