নৌকায় ভোট চেয়ে কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কক্সবাজার

কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে গতকাল আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়া উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য দেন ছবি: বাসস

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় আনতে কক্সবাজারবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি আহ্বান জানান। সময় উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে ভোট দেয়ার বিষয়ে ওয়াদা করেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা ১৮-তে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এসেছি। টানা তিনবার ক্ষমতায় রয়েছি। দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভোট হবে, সেবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন। আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো? আবার আসিবো ফিরে এই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের তীরে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নেয়া নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়েছে।

গতকাল হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে ৫৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। ২৯ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার গণপূর্ত উদ্যান, বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ, কুতুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স ভবন, পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস ভবন, শেখ হাসিনা জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, কক্সবাজার জেলার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, শাহপরীর দ্বীপে সি ডাইক অংশে বাঁধ পুনর্নির্মাণ প্রতিরক্ষা কাজ, কক্সবাজার পৌরসভার এয়ারপোর্ট রোড আরসিসিকরণ অন্যান্য, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন ভবন ইত্যাদি।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প, ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কে ধুরুংঘাট আকবর বলী ঘাটে জেটি নির্মাণ, মহেশখালী গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলোর পুনর্বাসন প্রকল্প।

এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়া উপজেলার সমুদ্র-তীরবর্তী ইনানীতে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের নৌবাহিনী উপকূলীয় সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চারদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ-২০২২-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

সেখানে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সংঘাত নয়, সমঝোতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি এবং সৌহার্দ স্থাপন করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি হিসেবে আমরা সর্বদা বৈশ্বিক আঞ্চলিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। সেই নীতি মেনেই আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই নীতিমালাই মেনে চলি। প্রতিবেশী এবং আঞ্চলিক সব দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক সীমানার মাধ্যমে আমাদের সব দেশ বিভক্ত হলেও বন্ধুত্বের সেতুবন্ধে সমুদ্র উপকূলীয় সব দেশের সঙ্গে আমরা একই সূত্রে গাথা। বিশাল জলরাশি প্রকৃতপক্ষে আমাদের এক করেছে। আইএফআর-২০২২ সবার মধ্যে বন্ধুত্বকে আরো সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে বলেও আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনার দেশ। আমি আশা করি, আইএফআরে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সমুদ্র, সমুদ্র-তীরবর্তী অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা, পর্যটন সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী . হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর--আলম চৌধুরী লিটন, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একাধিক সংসদ সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রমুখ। দেশে প্রথমবারের মতো আইএফআর ২০২২ আয়োজন করায় নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান।

ফ্লিট রিভিউতে অংশ নেয়া দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, মিসর, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, ফিলিস্তিন, সুদান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র। ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়োজন চলবে।

এর আগে গতকাল সকাল ১০টার দিকে ইনানী সমুদ্রসৈকতের অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই নৌবাহিনীর প্রথা অনুযায়ী শিপস বেল বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এরপর বিভিন্ন দেশের নৌসদস্যদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ হয়। পরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াত সমুদ্রে বিশেষ মহড়া চালায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন