ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা

আরো ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তাদের আরো ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। ঋণে সুদের হার হবে শতাংশ। একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন।

করোনা মহামারী-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ঋণদান কর্মসূচি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দুই ধাপে ৩০০ কোটি টাকা উদ্যোক্তা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়।

অর্থ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রত্যাবর্তনকৃত অর্থ এবং নিজস্ব তহবিল দ্বারা এসএমই ফাউন্ডেশন একটি রিভলভিং ফান্ড গঠন করেছে। রিভলভিং ফান্ড থেকে এসএমই উদ্যোক্তা, ক্লাস্টার, ক্লায়েন্টেল গ্রুপ, অ্যাসোসিয়েশন চেম্বারের সদস্য এবং নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে নতুন ধাপের ঋণ বিতরণ করা হবে। ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় রিভলভিং ফান্ড পরিচালনার নিমিত্তে পলিসি গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। লক্ষ্যে ১৮টি ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। গতকাল রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন অংশীদার ১৫টি ব্যাংক তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা। ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক . মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক . মো. মফিজুর রহমান এবং ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রণোদনা প্যাকেজের রিভলভিং ফান্ড থেকে ঋণ বিতরণ নীতিমালার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার।

পলিসি গাইডলাইন অনুযায়ী গ্রামীণ প্রান্তিক পর্যায়ের অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই সাব-সেক্টর, ক্লাস্টার এবং ভ্যালু চেইনের আওতাভুক্ত উদ্যোক্তা; সারা দেশের নারী-উদ্যোক্তা; নতুন উদ্যোক্তা অর্থাৎ যারা এখনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাননি; পশ্চাত্পদ অঞ্চল, উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা; দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ট্রেডবডি, এসএমই অ্যাসোসিয়েশন, নারী-উদ্যোক্তা সংগঠন, নাসিব এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ জেলা উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশকৃত উদ্যোক্তা।

অংশীদার ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জামানতবিহীন ঋণ বিতরণের বিষয়ে উৎসাহিত করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি, সামাজিক গ্যারান্টি, গ্রুপ গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ প্রদানের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হবে সর্বোচ্চ তিন বছর। ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। মোট ঋণের ২৫ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তার ঋণ ১০ লাখ টাকা বা তার চেয়ে কম হতে হবে।

ক্লাস্টার সেক্টরের ভ্যালু চেইন যেমন, টেক্সটাইল খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, সুতা, রঙ, স্ক্রিন প্রিন্ট, প্যাকেজিং, খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদিত পণ্য পাইকারি খুচরা বিক্রেতারা অগ্রাধিকার পাবেন। ভ্যালু চেইনের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ ব্যবসা (ট্রেডিং) খাতে প্রদান করা যাবে। ব্যাংকার-কাস্টমার সম্পর্ক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পাঁচজন উদ্যোক্তার অনুকূলে গ্রুপভিত্তিক ঋণ বিতরণ করা যাবে। ফাউন্ডেশন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ আদায় কার্যক্রম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করবে। ঋণ বিতরণের পর এসএমই ফাউন্ডেশনের নিজস্ব পদ্ধতি লোকবল দ্বারা সরেজমিন পরিদর্শন করে চুক্তি অনুযায়ী এবং সঠিক উদ্যোক্তার অনুকূলে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে কিনা, তা যাচাই নিশ্চিত করবে। তবে অনুৎপাদনশীল খাত যেমন মুদি দোকান, ওষুধ বিক্রেতা, হার্ডওয়্যার বিক্রেতা এবং পরিবেশ দূষণকারী যেমন ইটভাটা, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতাকে কর্মসূচির আওতায় ঋণ প্রদান করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের প্রণোদনার আওতায় হাজার ১০৮ জন মাইক্রো, ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তার মাঝে এর আগে ৩০০ কোটি টাকা এবং ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় প্রায় হাজার ২০০ জন উদ্যোক্তার মাঝে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন