বিএসইসির পদক্ষেপে দরপতন থামল পুঁজিবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই অস্থিরতা শুরু হয় দেশের পুঁজিবাজারে। টানা তিন কার্যদিবসে সূচক ২৪৩ পয়েন্ট কমার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দরপতন আরো তীব্র হওয়ার শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফলে গতকাল বড় দরপতনের হাত থেকে রক্ষা পায় দেশের পুঁজিবাজার।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে আগের দিনের তুলনায় ১৩৮ পয়েন্ট কমে হাজার ৩১৯ পয়েন্টে নেমে আসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স। অবশ্য এর পরই পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় বিএসইসির পদক্ষেপ নেয়ার খবরে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত গতকাল দিন শেষে ১৮ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ৪৫৭ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বেক্সিমকো লিমিটেড, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ওরিয়ন ফার্মার শেয়ারের।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে গতকাল দুপুরে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সময় বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক . শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, বাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিএসইসি সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের দর কমার ক্ষেত্রে শতাংশ সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করেছে। ফলে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের দর আগের দিনের সমাপনী মূল্যের তুলনায় সর্বোচ্চ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে। তবে সিকিউরিটিজের দর বাড়ার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। পাশাপাশি বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। গতকাল থেকেই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা শুরু হয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত গোলার আঘাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টিকে পুঁজি করে একটি গোষ্ঠী গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তোলার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক শামসুদ্দিন জানান, এমন ৩৫ জনকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন গুজবে কান না দেন। পুঁজিবাজারে আইসিবি যাতে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি লেনদেনে গতি বাড়ানো বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে টি+ সেটলমেন্ট চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এটি দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই চালু করা হবে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভা হয়েছে। সেখানে কমিশনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সভায় ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক উৎসাহিত করেছে। যদিও এখনো অনেক ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়টি পর্ষদে অনুমোদন করেনি। কেউ কেউ অনুমোদন করলেও তহবিল গঠন করেনি। আবার কেউ তহবিল গঠন করলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। অবস্থায় বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর সিএফও এবং ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে আজ কমিশন বৈঠক করবে। বৈঠকে পুঁজিবাজারে বিশেষ তহবিলের মাধ্যমে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হবে বলে জানান তিনি।

ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল সামান্য কমে হাজার ৩৭৪ দশমিক শূন্য পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৩৭৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে প্রায় পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৩৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে।

ডিএসইতে গতকাল ৭৪৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৭৪০ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৮টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে মাত্র ২১৭টির, কমেছে ১১৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৫টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়েছে বিবিধ খাত। ১২ দশমিক শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের দখলে ছিল লেনদেনের শতাংশ। এছাড়া ব্যাংক খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের দশমিক শতাংশ। গতকাল সিমেন্ট খাতে সবচেয়ে বেশি দশমিক শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে দশমিক শতাংশ নেতিবাচক রিটার্নের ভিত্তিতে শীর্ষে ছিল খাদ্য আনুষঙ্গিক খাত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন