নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল মিষ্টি নিয়ে যান পরাজিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের মাসদাইরের বাসায়। এ সময় আইভী মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন, আর তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন তৈমুর আলম খন্দকার।
টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয়লাভের পর গতকাল বিকালে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে তৈমুরের বাসায় যান আইভী। এ সময় তৈমুর ও তার পরিবারের সদস্যরা আইভীকে স্বাগত জানান। পরে দুই নেতা পাশাপাশি বসে মিষ্টিমুখ করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
রোববারের নির্বাচনে তৈমুরকে ৬৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান আইভী। তবে নির্বাচনের বৈরিতা ভুলে গেলেন দুজনই। আইভী দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। এটা বজায় থাকবে। আমি পুরো নির্বাচনে বলার চেষ্টা করেছি, রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি। কিন্তু পারিবারিক সম্পর্কের জায়গায় ঘাটতি হবে না। এটা কোনোদিন ব্যাহত হবে না।
প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তৈমুরের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করে মেয়র বলেন, অবশ্যই আমি কাকার পরামর্শ নেব। তিনি অতীতেও পরামর্শ দিয়েছেন। আমি যখন পৌরসভায় নির্বাচিত হয়ে এলাম, তখন কাকাকে সঙ্গে নিয়েই হীরালাল খাল উদ্ধার করেছি। সমস্যায় বিভিন্ন সময় কথা বলেছি। আব্বার একটা স্কুলের জন্য তৈমুর কাকা সহযোগিতা করেছেন। আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ। যে যে দলই করি না কেন, প্রত্যেকের সঙ্গেই তো একটা সম্পর্ক আছে।
তিনি আরো বলেন, জনগণের স্বার্থে, নারায়ণগঞ্জের স্বার্থে, দলের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করাটাই একটা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ ইবাদতের কাজ আমরা সবাই করব। এটাই আমি বিশ্বাস করি। আমি পরামর্শ চাইব। যে এজেন্ডাগুলো কাকা দিয়েছেন, আমি সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
তৈমুর বলেন, আমি আইভীর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘ জীবন ও ভালো রাজনৈতিক জীবন কামনা করি। প্রশাসক হিসেবে, মেয়র হিসেবে তার সাফল্য কামনা করি।
আইভীর বাবা আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহমদ চুনকা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তাকে স্মরণ করে তৈমুর বলেন, আইভীর বাবা আলী আহমদ চুনকার হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জের সামাজিক-রাজনৈতিক ও শ্রমিকদের সংগঠনে আমার প্রবেশ। আমার মাকে তিনি সালাম করতেন। আমিও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তাকে এখনো ভাইজান বলি। তার মেয়ের পেছনে আমি আছি। যেখানে যে অবস্থায় সে থাকে, তার যেকোনো বিপদ-আপদ যেকোনো সুবিধা-অসুবিধায় অদৃশ্য শক্তির মতো তার মাথায় আমার হাত থাকে।
এ সময় তৈমুর পাশে বসা আইভীর মাথায় হাত রেখে বলেন, অতএব এ নির্বাচন কোনো বিষয় না। নির্বাচন চলে গেছে। আগামী দিনেও আমি তার পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ। এখানে অন্য কোনো কথা কাজে লাগবে না। এটা অন্তরের সম্পর্ক, আত্মিক সম্পর্ক।
এদিকে গতকাল দুপুরে দেওভোগে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের আইভী বলেন, ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন একটি আধুনিক পদ্ধতি। ইভিএমএ ভোটগ্রহণ যদি আরো ফাস্ট হতো, জয়ের ব্যবধান আরো বাড়ত। স্লো ভোটগ্রহণের কারণে অনেক নারী ভোট দিতে পারেননি। বিশেষ করে নদীর পূর্বপাড়ে অনেক নারী ভোট দিতে না পেরে চলে গেছেন। নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্র দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় ফেলানো হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। সবাই জানে বয়স্ক, নারী ভোটাররা আমাকে ভোট দেন। আমার ভোট ব্যাংকে হানা দেয়ার জন্য এটা করা হয়েছে কিনা খুঁজে দেখতে হবে।